ইন্টারনেটে ফুলে ফাঁপছে যৌনব্যবসা, বাড়ছে ক্যাম-গার্ল
---
বিশ্বজুড়েই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়ে ওঠছে ওয়েবক্যাম বা কম্পিউটারে সংযুক্ত ক্যামেরার যৌনতা ব্যবসা। হাজার হাজার তরুণী ক্যাম-গার্ল হিসেবে কাজ করছেন। কেউ বাড়িতে, কেউ বা স্টুডিওতে বসেই এ কাজ করছেন। নিজে যেমন আয় করছেন, তেমনি নিয়োগকারী স্টুডিও কিংবা ওয়েবসাইট মালিকরাও কামিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি ডলার।
প্রায় ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সেক্স মার্কেটের বেশিরভাগ ক্রেতাই উত্তর আমেরিকা কিংবা পশ্চিম ইউরোপের। তবে গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট দুনিয়া যতোই সম্প্রসারিত হচ্ছে, ততোই এ সেক্সইন্ডাস্ট্রি ফুলে ফেঁপে উঠছে।
তবে ওয়েবক্যামের মাধ্যমে যৌনতা ব্যবসা অনেকটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে রোমানিয়ায়। এদেশে এটি এখন পুরোপুরি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে চাকরি প্রত্যাশী হাজার হাজার তরুণী বা নারী ক্যাম-গার্ল হিসেবে কাজ খুঁজে পাচ্ছেন। তারা কখনও বাড়িতে কখনও বা স্টুডিওতে বসে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছেন।
রোমানিয়ার রাজধানী বুখেরেস্টে এমনি এক স্টুডিওতে কাজ করেন লানা নামের এক তরুণী। তাকে প্রতিদিন কাজ করতে হয় আট ঘণ্টা ধরে। তাতে তার মাসিক আয় প্রায় চার হাজার ইউরো। এই আয় রোমানিয়ার মাথাপিছু গড় আয়ের প্রায় দশগুণ।
একই সঙ্গে লানার নিয়োগকারী স্টুডিও-২০ আয় করে মাসে একই পরিমাণ ইউরো। আর যে প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফি আদায় করে, তারা আয় করে এর দ্বিগুণ। মাসে প্রায় ৮ হাজার ইউরো। ওয়েবক্যাম যৌনতার এই ইন্ডাস্ট্রিতে ২০১৬ সালে ব্যবসা হয়েছে তিন বিলিয়ন ডলারের।
কী হয় স্টুডিওতে?
বুখারেস্টের একটি বহুতল ভবনের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন বেশ কয়েকজন তরুণী। তারা হাসছেন, কথা বলছেন। ভোর বেলাতেও তাদের মুখে কড়া মেকআপ। ভবনটির নিচতলার দুইটি ফ্লোর নিয়ে স্টুডিও-২০ এর অফিস। ভেতরে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট কক্ষ। যেগুলো কড়া রঙে সাজানো। ভেতরে সুন্দর করে সাজানো বিছানা, টেবিল আর সোফা। এখানে রুম বন্ধ থাকা মানে, ভেতরে ব্যবসা অর্থাৎ সরাসরি সম্প্রচার চলছে।
কী করেন মডেলরা?
ভার্চুয়াল সম্পর্ক আর সাইবার সেক্সের বিশ্বে তরুণীরা মডেল। আর তাদের সামনে অর্থাৎ ইন্টারনেটের অপর প্রান্তে বসে আছেন মেম্বার বা সদস্য। রুমের এক প্রান্তে একটি বিশাল কম্পিউটার স্ক্রিন। শক্তিশালী ক্যামেরা আর পেশাদারি ক্যামেরা লাইট।
লানাকে বসতে হয় এমন একটি রুমে। প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তখন শত শত চোখ তার দিকেই তাকিয়ে থাকে। লানা জানালেন, এভাবে দেখলে তার কোনো আয় হবে না। যতক্ষণে কোনো গ্রাহক তাকে গো প্রাইভেট বা ব্যক্তিগতভাবে দেখতে চাইবে তখনই আয় শুরু হবে।
লানা জানালেন, গ্রাহকদের সঙ্গে বেশিরভাগ সময়ই একান্ত সেক্স নিয়ে আলাপচারিতা। তবে কখনও কখনও তাকে কিছু ভূমিকা রাখতে হয়। তবে খুব কম সময়ের মধ্যে তাকে নগ্ন হতে হয় কিংবা যৌনতায় যেতে হয়।
লানা যে ওয়েবসাইটের জন্য কাজ করেন, সেখানে প্রতিদিন তিন থেকে চার কোটি সদস্য ভিজিট করেন। একই সময়ে সেখানে অন্তত কুড়ি হাজার গ্রাহক থাকে। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
কীভাবে ক্যাম-গার্ল?
গ্রাজুয়েশনের পর লানা একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ নিয়েছিলেন। তবে রোমানিয়ার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশি আয়ের আশায় জড়িয়ে পড়েন এই ব্যবসায়। প্রথম দিন এখানে আসার পর একা ছিলেন রুমে। তার মনে হচ্ছিল, শত শত চোখ যেন তার চারদিকে ঘুরছে। লানা পুরোপুরি বুঝতে পারছিলেন না, গ্রাহকরা কী বলছে? কি চাইছে? সেটা ছিল তার জন্য ভীতিকর ব্যাপার। তবে লানা আস্তে আস্তে বুঝতে শিখেছেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, একজন পেয়িং গ্রাহককে যতক্ষণ সম্ভব অনলাইনে ধরে রাখতে হবে। কীভাবে কী উপায়ে তাদের বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায়, সে কৌশল শেখাতে আছেন প্রশিক্ষক। গ্রাহকদের মন জয় করতে মনোবিজ্ঞানীরাও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সেই সঙ্গে ইংলিশ শিক্ষকও নিয়োগ দিয়েছে স্টুডিও কর্তৃপক্ষ। এমনকি তরুণীদের ভৌগোলিক প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। যাতে বিশ্বের যেকোনো এলাকার গ্রাহকের সঙ্গেই তারা তাদের সেখানকার বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারে।
শুধু তরুণীরাই নয়, সমকামীদের জন্য পুরুষ শাখাও আছে। রুমানিয়ার বাইরে স্টুডিও-২০ এর শাখা রয়েছে কলম্বিয়ার ক্যালে, বুদাপেস্ট আর লস অ্যাঞ্জেলসেও। সূত্র: বিবিসি।