রোহিঙ্গা নির্যাতনের বর্ণনা বহির্বিশ্বে জানানো হবে: ওআইসি মহাসচিব
---
উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন, নিপিড়ন ও অত্যাচারের বর্ণনা বহির্বিশ্বে জানানো হবে।
শুক্রবার নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরাণার্থী ক্যাম্প ও বস্তি পরিদর্শনকালে তিনি এই কথা জানান।
দুুপুর সাড়ে ১২দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে উপস্থিত হয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতে মিলিত হন।
এরপর তিনি আন-রেজিস্ট্রাড ক্যাম্পের ডি-ব্লকে একটি রোহিঙ্গা ঝুঁপড়িতে ঢুকে সেখানে অবস্থানকারী মিয়ানমারের মংডু এলাকার নারীরবিল গ্রামের নজির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, একই থানার ছালিপাড়া গ্রামের শাহীনের স্ত্রী শফি নুর এবং একই এলাকার আব্দুর রহিমের স্ত্রী মিসফালা সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। এসময় তাদের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কাহিনী শোনেন। পরে ওআইসি মহাসচিব ডি-ব্লকের আইওএমের একটি স্কুলে অপেক্ষমান নির্যাতিত ৩০ নারী-পুরুষের সঙ্গে একান্ত আলাপ করেন।
মিয়ানমারে মংডু থানার হাতগইজ্জাপাড়া গ্রামের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা গৃহবধূ জামালিকা মহাসচিবকে বলেন, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা তার স্বামী খাইরুল আমিনকে দোকান থেকে বের করে রাতের আধারে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাকেও পার্শ্ববর্তী জঙলে নিয়ে গণধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনারা।
নির্যাতনের পা হারানো মংডু থানার গুয়াছি গ্রামের জাকারিয়া বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তাকে ধরে নিয়ে গুলি করলে ডান পা চির দিনের জন্য হারিয়ে যায়। তাদের এসব নির্যাতনের বর্ণনা মনযোগ দিয়ে শোনেন ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা ঘুরে কুতুপালং ক্যাম্পের অভ্যন্তরে খেলার মাঠে ওআইসির মহাসচিব ড. সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানান। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নাগরিকত্বসহ তাদের সহায় সম্পত্তি ফেরত দিয়ে নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা হবে।
রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে শোনা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বর্ণনার কথা বহির্বিশ্বে জানানো হবে। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের দেশীয় আইনকানুন মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি। পরিশেষে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে চরম নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা হবেও জানান তিনি।
এসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওআইসি মহাসচিবের সাথে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সচিব বাকি বিল্লাহ, জেলা প্রশাসক আলী হোসেন, ৩-বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মার্মা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন প্রমুখ।
ওআইসির মহাসচিব বুধবার চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। ঢাকায় তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য এবং তাদের সঙ্গে ওআইসির একাত্বতা প্রকাশের জন্য তিনি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।