সাপ নিয়ে আতঙ্কিত মানুষকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শ
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : শুধু রাজশাহীতেই গত ১১ দিনে মারা পড়েছে ২৫৬টির মতো বিষধর গোখরা সাপ। এ মাসের শুরু থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই মিলছে সাপের আস্তানা। পিটিয়ে মারা হচ্ছে সেসব সাপের বাচ্চা এবং ডিম।
এ অবস্থায় শনিবার বিকেলে সাপ নিয়ে নিজের ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
‘ভয়ে ভয়ে একটা কথা বলি!’ শিরোনামে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এই সংসদ সদস্য নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় লেখেন, ‘যতদুর জানি সাপ নিরীহ প্রাণীদের একটা। সাপ শুধুমাত্র আঘাত পেলে ছোবল দেয়। দেশের হাসপাতালগুলোতে এখন যথেষ্ট পরিমান এন্টিভেনম আছে।’
রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাপ নিধনের খবর প্রকাশ হচ্ছে গণমাধ্যমে। এতে অনেকে সাপ মারতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘কয়েকদিন থেকে দেখছি রাজশাহী থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে সাপ খুঁজে খুঁজে মারা হচ্ছে। প্রায় সব পত্রিকা সেটা গ্রহণযোগ্যভাবে প্রচার করছে। না বুঝে নতুন করে মানুষ সাপ মারতে উৎসাহিত হচ্ছে।’
সাপের উপকারিতা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী লেখেন, ‘এই সব জায়গার কোথাওই সাপেড় কামড়ে সম্প্রতি কেউ মারা গেছেন তাও শোনা যায়নি। কিন্তু তবুও চলছে সাপ মারা। আপনারা জানেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রাখতে সাপের অবদান? পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ সাপের প্রধান খাবার। সাপ এগুলো না খেলে আমরা হয়তো টিকতে পারতাম না।’
সাপ নিধনের ক্ষতির দিকটিও ফেসবুকে তুলে ধরেন শাহরিয়ার আলম লেখেন, ‘ইদুরের গর্তে ঢোকে সাপ ইঁদুর ধরার জন্য। যেসব জায়গায় সাপ ধরে ধরে মারা হচ্ছে সেসব জায়গায় আগেও সাপ ছিলো, বাচ্চা হতো। সেই সাপগুলো ইদুর নিধন করতো। বর্তমান ধারা চলতে থাকলে এই জায়গাগুলো ইঁদুরের দখলে চলে যাবে। আর ইঁদুর যে কি ক্ষতি করতে পারে তা আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি।’
সাপ নিয়ে আতঙ্কিত মানুষকে ফেসবুকে একটি পরামর্শও দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘ঝুঁকি মনে হলে বাসায় কার্বলিক এসিড রাখবেন। খুব সমস্যা মনে হলে সাপ ধরে (গ্রামে সাপ ধরার মানুষ পাওয়া যায়) বন বিভাগ বা প্রাণী বিভাগে দিয়ে দিবেন। কিন্তু অযথা মেরে নতুন বিপদ ডেকে আনবেন না দয়া করে।’
শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ফেসবুকে প্রতিমন্ত্রীর এই পোস্ট দেয়ার পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই লেখাটিতে লাইক দেন প্রায় দু’হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী। সেখানে বহু মানুষ নিজেদের মতামতও ব্যক্ত করেন। অনেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে সমর্থন করলেও কেউ অভিযোগ করেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম থাকে না। সাপ নিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদেরও কোনো আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
গত ৪ জুলাই থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজশাহী নগরী ছাড়াও জেলার তানোর, দুর্গাপুর, বাগমারা, মোহনপুর ও চারঘাট উপজেলায় মারা হয়েছে ২৫৬টি গোখরা। ভেঙে নষ্ট করা হয়েছে ১৮৮টি ডিমও। গৃহস্থবাড়ির শোবার ঘর, গোয়ালঘর, রান্নাঘর এমনকি বারান্দায় মিলেছে এসব। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গলে ডিম পাড়ার জায়গা কমে যাওয়ায় মানুষের ঘরমুখী হচ্ছে বিষধর এই সরীসৃপ প্রাণী।