কেন ‘মুখোশ’ পরে থাকেন এই ইরানি নারীরা?
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :প্রাচীন পারস্য সভ্যতার দেশ ইরান। সেই সভ্যতার চিহ্ন এখন টিকে আছে ধ্বংসাবশেষে। কিন্তু ইরানিদের সংস্কৃতিতে পুরোদমেই রয়ে গেছে তাদের পূর্ব-পুরুষদের প্রভাব। এখনও প্রাচীন সেই সভ্যতাটির রীতি, প্রথা মেনে চলে ইরানের নারী-পুরুষরা। দেশটির এমনই একটি সম্প্রদায় বান্দারি গোষ্ঠি।
সম্প্রদায়টির মধ্যে এখনও টিকে রয়েছে প্রাচীন পারস্য সভ্যতার অনেক প্রথা। এর মধ্যে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে নারীদের ‘মুখোশ’ পরিধানের সংস্কৃতি। সব সময়ই বিশেষ এক ধরনের মুখোশ পরে থাকেন বান্দারি নারীরা।
এই সম্প্রদায়ের বাস ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমুজান প্রদেশে। এক সময় সারা পৃথিবীর মসলা বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল জায়গাটি। মূলত খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার অব্দ থেকেই বাণিজ্যিক শহর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে হরমুজান। এ কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে আফ্রিকা, আরব, ভারত এবং পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতির মানুষের একটি মিলনকেন্দ্র ছিল এটি।
ইরানের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের পোশাকেও রয়েছে পার্থক্য। প্রচলিত কালো চাদরের পরিবর্তে রঙিন পোশাক পরতে অভ্যস্ত বান্দারি সম্প্রদায়ের নারীরা। আর পুরুষদের পোশাক অনেকটাই আরবদের মতো। তবে এর বাইরে এখানকার নারীদের পোশাকের একটি আবশ্যকীয় অংশ হিসেবে থাকে বিশেষ ধরনের একটি মুখোশ, যাকে তারা বলেন ‘বোরেগেহ’। শিয়া হোক বা সুন্নি- সব নারীই মুখে পরেন এই বোরেগেহ।
গত কয়েক শতক ধরে এই সংস্কৃতি চর্চা করে আসছেন বান্দারি নারীরা। যদিও এই ঐতিহ্যের পেছনের ইতিহাস জানা যায় না। কেউ কেউ বলে থাকেন, পর্তুগিজ শাসনামলে ওই অঞ্চলের সুন্দরী মেয়েরা দাস ব্যবসায়ীদের নজর এড়াতে প্রথম এ ধরনের পোশাক পরতে শুরু করেন।
এখন এটি তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে গেছে। বোরেগেহ পরে এর বাইরে আরেকটি সুবিধা পান তারা। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সূর্যের তাপ অনেক বেশি থাকে। তাই এই মুখোশের মাধ্যমে নিজেদের চোখ এবং ত্বককে সূর্যতাপ থেকে রক্ষা করতে পারেন। ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ- যেমন ওমান, কুয়েত এবং আরব উপদ্বীপের রাষ্ট্রগুলোতেও একই ধরনের রীতির প্রচলন দেখা যায়।
হরমুজানের নারীদের পরা এই মুখোশের মধ্যেও রয়েছে পার্থক্য। কোনটা পুরো মুখমণ্ডল ঢেকে দেয়, কোনটা তার চেয়ে একটু ছোট, আবার কোনটা চোখের চারপাশের অংশটুকু একটু বেশি খোলা রাখে। এগুলোর কিছু চামড়ার তৈরি, কিছু অ্যাম্ব্রয়ডারি করা ফেব্রিকের তৈরি। তবে প্রায় সবগুলোই নারীদের কপাল ও নাক ঢেকে রাখে। যারা এটাকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করতে চান তারা মুখমণ্ডল এবং মাথাও ঢেকে রাখেন। এসব মুখোশের আকার এবং রঙ দেখে স্থানীয়রা সহজেই নারীটির গ্রাম, তার সামাজিক অবস্থান এবং বংশ চিনতে পারেন।
নাকের নিচের অংশ ঢেকে রাখা মুখোশ প্রধানত পরে কেশম দ্বীপের গ্রামগুলোর নারীরা। বলা হয়ে থাকে, তাদের কঠোর প্রকৃতির এবং কষ্টসহিষ্ণু হিসেবে প্রদর্শন করতেই এ ধরনের মুখোশ পরার প্রচলন হয়। অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিদেশি শক্তির আক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি থাকতো। তাই শত্রুসেনারা যখন মুখোশ পরিহিত কোনও নারীকে দেখতো তারা তাকে পুরুষ সৈন্য মনে করে ভয় পেত।
এখন যদিও বান্দারি নারীদের অনেকেই বিশেষ ওই মুখোশ পরা ছেড়ে দিচ্ছেন, স্বাভাবিক পদ্ধতিতে পর্দা করাকেই পছন্দ করছেন। তবে এই কাজটি করছেন শুধু তরুণীরা। অবশ্য মুখোশহীন অবস্থায় ছবি তুলতে এখনও অনিচ্ছুক তারা। স্থানীয় এক তরুণী জানান, তাদের রক্ষণশীল সংস্কৃতিতে নারীদের কোনও অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত না। রহস্যময় এই বোরেগেহর কারণে বান্দারি নারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাটাও কঠিন।