‘ব্যর্থ হলে দেশে চার শ নারী বিচারক তৈরি হতো না’
---
নিউজ ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেছেন, দেশের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হতাম, তাহলে আজ দেশের চার শ নারী বিচারক তৈরি হতো না। তিনি বলেন, আমি কখনো জেনে শুনে ও বুঝে ভুল বিচার করিনি। সব সময় সততা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে বিচারকাজ সম্পন্ন করেছি। আমার দেওয়া রায়ে অনেকে সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল বিভাগে গিয়েছেন, আপিল বিভাগ ওই রায়ের ওপর পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনার জবাবে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এসব কথা বলেন। নাজমুন আরা বলেন, আল্লাহর পরই ন্যায়বিচারকের স্থান। জেনে শুনে ভুল বিচার করলে তা হবে মহাপাপ। আইনজীবীদের সহায়তা ছাড়া বিচারকদের সঠিক বিচার করা কঠিন হয়ে যায়। বিচারক হিসেবে আমার যা অর্জন তা আইনজীবীদের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে বিচারক বানিয়েছেন, তা না হলে আমার বিচারক হওয়া সম্ভব হতো না। বিচারক হওয়ার পেছনে নিজের সংগ্রাম-চেষ্টার কথা তুলে ধরতে এক প্রসঙ্গে তিনি তিনি তার মায়ের অসুস্থতার ঘটনাও উপস্থিতির সামনে তুলে ধরেন। আজ সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এজলাস কক্ষে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ, সিনিয়র আইনজীবীসহ বারের কয়েক শ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নাজমুন আরাকে উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনি, আপনার প্রজ্ঞা, মেধা ও সততা দিয়ে বিচার বিভাগকে সমৃদ্ধ করেছেন। আইনের মারপ্যাঁচে বিচারপ্রার্থীরা যাতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, সে দিকেও দিয়েছেন সুদৃষ্টি। বার সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেন, বিচার কাজে দক্ষ, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বিচারক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
উল্লেখ্য, বিচারপতি নাজমুন আরা ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুন্সেফ হিসেবে (সহকারী জজ) নিয়োগ পান। ওই নিয়োগের মধ্য দিয়েই তিনি দেশের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে নাম লেখান। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর হন জেলা জজ। জেলা জজ হিসেবে যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে তিনি ২০০০ সালের ২৮ মে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
এর দুই বছর পর ২০০২ সালের ২৮ মে স্থায়ী বিচারপতি হন। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। এরপর শপথ নেন আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে। ছয় বছর আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর শুক্রবার তিনি অবসরে যাচ্ছেন।