রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসীদের খুনখারাবি
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর বর্বর নির্যাতন ও তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বছরের পর বছর তারা এদেশে শরণার্থী শিবিরে থাকছে। সম্প্রতি তাদের একটি অংশ একের পর এক চালিয়ে যাচ্ছে খুন, গুম, অপহরণ ইত্যাদি অপকর্ম। তাদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের প্রতিনিধিত্বকারী নেতারা। এই অপকর্ম করার জন্য তারা ‘হারাকা আল-ইয়াকিন’ – এই বাহারী নামে একটি সংগঠনও গড়ে তুলেছে। তথাকথিত সংগঠনটি দীর্ঘদিন যাবত উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে – এমনটাই দাবি রোহিঙ্গাদের।
জানা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে দুই জন রোহিঙ্গা নেতাসহ তিন জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ ও খুন করেছে আল ইয়াকিন নামের এই সশস্ত্র সংগঠনটি।
ক্যাম্পবাসী সাধারণ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানায়, সন্ধ্যা নামলেই ওরা একের এক নেতার বাড়িতে হানা দিয়ে যাকে পায় তাকেই উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।
স্থানীয় রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে এদের সংখ্যা শতাধিক। আরেকটি সূত্র জানায়, এই সন্ত্রাসীদের কয়েকজন হলো কলিম উল্লাহ, ছলিম উল্লাহ, ইসমাইল, জাবের (৩২), মোঃ নুর (২৮), মনির আহামদ (২৮), খুইল্যা মিয়া মুন্না (৩২), সলিম (২৬), কলিমুল্লাহ (২৮)।
জানা গেছে, গত ১৩ জুন রাতে ২০/২৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পে হানা দিয়ে ই-১ ব্লক নেতা আয়ুব মাঝি ও কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের শরণার্থী আলী আহমদের ছেলে সেলিমকে তাদের ঘর লুটপাট করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর গত ১৮ জুন দুপুরে বালুখালী তেলীপাড়া খাল থেকে হাত পা বাঁধা ও গলা কাটা অবস্থায় সেলিমের এবং গত রবিবার রাত ৮টার দিকে অপহৃত রোহিঙ্গা আয়ুব মাঝির ভাসমান লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ।
একইভাবে গত ২৩ মে রাতে কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের মালয়েশিয়া ফেরত মৃত ইমাম হোসেনের ছেলে মোঃ শফি প্রকাশ বলিকে শিবির থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপহরণের ৩ দিনের মাথায় ২৫ মে সকালে মধুরছড়া জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ।
এক মাসের ব্যবধানে ৩টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড নিয়ে ক্যাম্প এলাকাসহ পুরো উখিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয়রা রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। কারণ হত্যাকান্ডে জড়িতদের এখনো পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনী আইনের আওতায় আনতে পারেনি।
কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক বলেন, ঈদের পরের দিন কোন কারণ ছাড়া ওই সন্ত্রাসীরা আমাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। আমার চিৎকারে অন্য রোহিঙ্গারা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। আমি কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বস্তিতে ফিরেছি। একের পর এক অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটায় আমরা যারা সরকারের আইন-কানুন মেনে এখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করি, তাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
উখিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মো.কায় কিসলো বিবার্তাকে বলেন, অপরাধীদের আটকের চেষ্টায় প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। সম্প্রতি চারজনকে আটকও করা হয়েছে।