নদীতে মানুষের ফেলা জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধে বিপাকে মাছ
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :টয়লেট এবং ড্রেনে অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ, গৃহস্থালি বিভিন্ন পরিষ্কারক পণ্য এবং অন্য অনেক কিছুই ফেলে থাকে, যা নদীতে গিয়ে মেশে। আর এটা নদীতে থাকা পুরুষ মাছগুলোকে হিজড়ায় পরিণত করছে।
নারী এবং পুরুষ উভয় স্বভাব সৃষ্টির জন্য মানুষের ইস্ট্রজেন হরমোনের মতো একই পদ্ধতিতে এসব পদার্থের রাসায়নিকগুলো মাছের ওপরেও প্রভাব ফেলে। নদীতে মেশা রাসায়নিক দ্রব্যগুলো প্রতি পাঁচটি পুরুষ মাছের মধ্যে একটি ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের শুক্রানু উৎপাদন হ্রাস করছে, পাশাপাশি ডিম্বাণু তৈরির দিকে যাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের বিশেষজ্ঞরা তাদের সাম্প্রতিক গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ৫০টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ২৫ শতাংশ মিঠা পানির পুরুষ মাছের মধ্যে এই নারীসংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। এছাড়াও গবেষকরা রাসায়নিকের প্রভাবে মাছের বংশ পরিবর্তন নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
এই প্রভাব সৃষ্টিকারী রাসায়নিকগুলো প্রায়ই নদীতে ফেলা গর্ভনিরোধক ওষুধ, গৃহস্থালি পরিষ্কারক পণ্য, প্লাস্টিক এবং কসমেটিক পণ্যর মাধ্যমে নদীতে মিশছে। অবসাদ দূর করার ওষুধগুলোর রাসায়নিকও মাছের প্রাকৃতির আচরণ পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে। গবেষকরা প্রায় ২০০ ধরনের রাসায়নিকের সন্ধান পেয়েছেন পানিতে, যা মাছে ইস্ট্রজেনের মতো হরমোন বাড়াতে পারে।
এর মধ্যে কিছু রাসায়নিক শুধু ‘ট্রান্সজেন্ডার’ মাছই তৈরি করছে না বরঞ্চ অপ্রত্যাশিত উপায়ে মাছের শারীরবৃত্তিকে প্রভাবিত করছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কম আক্রমণাত্মক এবং কম প্রতিযোগিতামূলক আচরণ প্রদর্শন, যা সাধারণত মেয়ে প্রজাতির আকৃষ্ট করার সঙ্গে যুক্ত, যা তাদের সফলভাবে বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা কম করে তোলে।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাছের শরীরবিজ্ঞানী এবং ইকো-টক্সিকোলজিস্ট অধ্যাপক চার্লস টাইলার বলেন, ‘আমরা দেখেছি মাছের স্বাস্থ্যের ওপর কিছু রাসায়নিক ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, যা আমরা ধারণা করেছিলাম।’
‘বিশেষ করে ট্রান্সজেনিক মাছে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে রাসায়নিকগুলো মাছের শরীরে রিয়েল টাইম প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখেছি যে, প্লাস্টিকে পাওয়া ইস্ট্রজেন মাছের হার্টের ভালভকে প্রভাবিত করে থাকে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোকে মাছের ওপর রাসায়নিক প্রভাব বিজ্ঞানীদের কাছে একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। যেমন ২০১০ সালে ওয়াশিংটন ডিসির পটোমোক নদীর ৮০ শতাংশের বেশি পুরুষ মাছে নারী বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে।
টাইলার আরো বলেন, ‘অন্যান্য গবেষণায়ও দেখানো হয়েছে যে অবসাদ প্রতিরোধ ওষুধগুলো সহ অন্যান্য রাসায়নিক নদীর পানিতে মেশার ফলে তা কিছু প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক লজ্জা কমাতে পারে।’
তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল