সৌদি ব্লকের দাবি না মানলে কী হবে কাতারের?

জুলাই ২, ২০১৭

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে যে ছয়টি আরব দেশ সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তারা দেশটির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংকট নিরসনে দেশগুলোর দেয়া ১৩ দফা দাবির সময়সীমা রোববার রাতে শেষ হতে যাচ্ছে।

এই সময়ের মধ্যে দাবিগুলো না মানলে কাতারের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে ওই ছয় দেশ। তবে এখনও দাবি মেনে নেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি কাতার। বরং সৌদি আরব এবং তার মিত্রদের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩ দফা দাবির একটিও কাতার মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জন্যই দাবিগুলো তৈরি করা হয়েছে। আরব দেশগুলো সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়নি, বরং কাতারের সার্বভৌমত্ব খর্ব করার লক্ষ্যেই তা করা হয়েছে।’ অবশ্য আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ নিরসনে বৈঠকে বসে আলোচনার জন্য দোহা প্রস্তুত আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে রোববার রাতের মধ্যে এসব দাবি না মানলে কাতারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত। তবে দাবি মেনে না নিলে কী হবে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

এর আগে গত ২৩ মে কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কিছু তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ শুরু হয়। ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। ওই অভিযোগকে শুরু থেকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে কাতারি প্রশাসন।

পরে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী চারটি আরব রাষ্ট্র ২২ জুন ১৩ দফা দাবির একটি তালিকা দেয় দোহাকে। এতে আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ আরও কিছু দাবি পূরণের কথা বলা হয়। ওইসব দাবির তালিকায় আরও আছে: কাতারে নির্মিত তুরস্কের সেনাঘাঁটি বন্ধ করা এবং যেসব ব্যক্তিকে তাদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া। ১০ দিনের মধ্যে এসব শর্ত মেনে নেয়ার জন্যও বলা হয় কাতারকে।

আরব বিশ্বের ইসলামি আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুড, হিজবুল্লাহ, আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের সঙ্গেও সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বলা হয় দেশটিকে। অবশ্য কাতার আগে থেকেই বলে আসছে, এসব সংগঠনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। কাতার শর্তগুলো মেনে নিলে প্রথম বছর প্রতি মাসে একবার দেশটির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় বছরে তিন মাস পরপর এটা করা হবে এবং পরবর্তী ১০ বছর বাৎসরিকভাবে কাতারকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

অবশ্য শুরুতেই এসব দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘কার্যকরযোগ্য নয়’ বলে প্রত্যাখ্যান করে কাতার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও দাবিগুলোকে বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছে।

আরব দেশগুলোও দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।

২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও ২০১৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর থেকে ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর চালানো হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর নির্যাতন। এতে সমর্থন দেয় সৌদি সরকার।