সৌদিতে ফিরছে নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের একটি সুপারমার্কেটের বাইরে একজন লম্বা দাড়িওয়ালা পুলিশ কর্মকর্তা কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে একজন গাড়িচালককে জেরা করছেন।
গাড়িতে নারী যাত্রী দেখে ওই পুলিশ কর্মকর্তা চালকের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার নারী থেকে দূরে থাকা উচিত।’ কিন্তু চালকের বিপদের বিষয় হলো, সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। আর তিনি একটি পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাঁর অধিকাংশ যাত্রীই হলো নারী। তিনি ওই কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আমি কী করে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করব? আমি তো তাঁদের যেখানে সেখানে ছেড়ে যেতে পারি না।’
এ আলাপে সৌদির রক্ষণশীল নৈতিকতা রক্ষা পুলিশের কর্মকাণ্ড ফুটে ওঠে। তাঁরা এভাবেই যুবকদের নৈতিকতার শিক্ষা দেয় পথেঘাটে।
সৌদি বাদশাহর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ মনোনীত হওয়ার পর সৌদিতে নৈতিকতা রক্ষা পুলিশকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
যুবরাজ হওয়ার আগেই মোহাম্মদ সৌদি ‘ভিশন-২০৩০’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেন। এর মধ্য দিয়ে তেলনির্ভর এই দেশটি তাদের অর্থনীতিকে আধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশি কর্মী ছাঁটাই করে সেখানে দেশি কর্মহীন যুবকদের নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তাঁর মধ্যে রয়েছে নৈতিকতা রক্ষা পুলিশকে আবার ফিরিয়ে আনা।
মোহাম্মদ বিন সালমানের অভিষেকের পর গত বুধবার সৌদিতে টুইটার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষের ধারণা, এটা নতুন যুগের সূচনা করবে। সৌদির এই নতুন যুগের সূচনালগ্নে আবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ম পুলিশ।
গত বছর রাস্তাঘাটে লোকজনকে হয়রানির জন্য নৈতিকতা রক্ষা পুলিশের কাছ থেকে পথচারীদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রিয়াদের বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, সেই পুলিশ আবার ফিরে এসেছে। শহরে বিভিন্ন জায়গায় নারীদের চুল খোলা কিংবা নারী-পুরুষকে একসঙ্গে দেখলে সেই পুলিশ সদস্যরা তিরস্কার করছে। যদিও তারা আগের চেয়ে অনেকটাই সংযত ও নমনীয়।
মোহাম্মদ বিন সালমান মনে করছেন, বেকারত্ব ঘোচাতে নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।
সৌদির কিছু নাগরিকও চান, এই পুলিশ ফিরে আসুক। তাঁদের ধারণা, এই পুলিশ সদস্যদের তুলে দেওয়ার পর অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে।
মোহাম্মদ আল সুবাই (২৭) নামের এক সৌদি নাগরিক বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষই চান, নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ ফিরে আসুক। এখানে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে।’
উম্মে জিয়াদ নামের ৪০ বছর বয়সী এক নারী পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা উচিত জানিয়ে বলেন, ‘তারা যদি সীমা অতিক্রম করে, তবে আমি তাদের সঙ্গে নেই। মাঝেমধ্যে তাদের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে যায়।’