শুক্রবার, ৩০শে জুন, ২০১৭ ইং ১৬ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আমিরের পাপ-মোচন

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ২১, ২০১৭
news-image

---

স্পোর্টস ডেস্ক : আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের নায়ক কে? এই প্রশ্নের জবাবে, সবার আগেই আসবে পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামানের নাম। দারুণ এক সেঞ্চুরি করা এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের হাতেই তো উঠেছিল ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

তবে, নিঃসন্দেহে মোহাম্মদ আমির না থাকলে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে মোকাবিলা করাটা কষ্টকর হতো পাকিস্তানের জন্য। এই পেসারই তো এক হাতে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত টপ-অর্ডার। সেই অবস্থা থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বিরাট কোহলির দল। হারতে হয়েছে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে।

বাঁ-হাতি পেসার আমিরের জন্য ম্যাচটাকে রূপকথার মতো প্রত্যাবর্তন হিসেবেই ধরা যায়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, বছর কয়েক আগেও গ্রামের বাড়িতে প্রতিবেশীরা আমিরের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতো। তবে, হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছে আমির ও তার পরিবার। এখন তারাই তাকে এবং তার পরিবারকে দেখছে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে।

সাত বছর আগে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাসিত করেছিল আইসিসি। সেই দিনগুলোর কথা আজও ভুলতে পারেন না এই পেসারের দুই ভাই নাভিদ এবং ইজাজ। তারাই এখন বলছেন, ‘রোববার ওভালে নতুন বল হাতে আমিরের স্পেলটাই সব লজ্জা ধুয়ে পরিবারকে শ্রদ্ধার জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’

শুধু পাকিস্তানে নয়, পাকিস্তানের বাইরেও আমিরের পরিবারকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে আগ্রহ। লাহোর থেকে ফোনে নাভিদ সোমবার ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডিতে চাঙ্গা বুঙ্গিয়াল গ্রামে তখন থাকতাম আমরা। আমির স্পট ফিক্সিংয়ে যখন দোষী সাব্যস্ত হয়, তখন গ্রামে লোকের সঙ্গে মিশতে বা কথা বলতেই লজ্জা করত। তার পর লাহোরে চলে আসি আমরা। কিন্তু আমাদের অনেক আত্মীয়ই রয়ে গিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডিতে। এখন গ্রামে গেলে ভাইয়ের জন্যই ফের চোখ তুলে সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারব।’

আমিরের পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই আনন্দিত তার পরিবার। পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের আনন্দে নাভিদ বলেন, ‘পাঁচ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর আমির চেয়েছিল এমন কিছু পারফরম্যান্স করতে যা ওকে আলাদা ভাবে চিনিয়ে দেবে। রবিবার ওভালে সেটা ও করে দেখিয়ে দিল।’

আর্থিক টানাপড়েনের পরিবারে জন্ম আমিরের। এটা-ওটা নিয়ে অভাব অনটন ছিলই। এর মধ্যেই নিজেকে গড়ে তোলের আমির। পরিবারে ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। এক বছর আগে শাস্তি কাটিয়ে আমির যখন দলে ফেরেন, তখন পাকিস্তানেই অনেকেই তার এই ফিরে আসার বিরুদ্ধে বলেছিলেন। কেউ কেউ দাবি করছিলেন, জাতীয় দলে আমিরকে কোচ মিকি আর্থার বাড়তি সুবিধা দিচ্ছেন। এমনকি আমির ক্যাম্পে ছিলেন বলেই দুই ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ ও আজহার আলী চলে গিয়েছিলেন ক্যাম্প ছেড়ে।

তবে, এর সবই এখন অতীত। গত বছর এশিয়া টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির প্রশংসার পরেই সব বন্ধ হয়ে যায়। আর গত রোববার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে নতুন বল হাতে ভারতের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি এবং শিখর ধাওয়ানকে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখিয়ে আমির এখন পাকিস্তানে জাতীয় বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন।

আমিরের এই ফিরে আসাটা কতটা কঠিন ছিল? বলতে গিয়ে যেন তার প্রথম কোচ বাজওয়ার বুকটা গর্বে ভরে উঠল। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর নির্বাসনের পর মাঠে ফিরে এ ভাবে পারফর্ম করাটা সহজ কাজ নয়। আমির সেই ফিটনেসটা বজায় রাখতে পেরেছে বলেই আজ সাফল্য পাচ্ছে। ওর জন্য আমার খুব গর্ব হয়।’

গত বছরই বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নারিস খানকে বিয়ে করেছেন আমির। মাঠের বাইরে নারিস আর মাঠের ভিতর শোয়েব মালিকের অভিভাবকত্বই বদলে দিয়েছে আমিরকে। এই রহস্য ভাঙলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডেরই (পিসিবি) এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পাক বোর্ডই শোয়েবকে মেন্টর করে দেয় আমিরের। যার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।’