পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে চলছে ৬৪ শতাংশ ইটভাটা
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের সহযোগিতা ও দৃঢ়ভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে, বায়ুদূষণের জন্য অন্যতম দায়ী দেশের ইটভাটার প্রায় ৬৪ শতাংশকে পরিববেশবান্ধব প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান পরিচালক জিয়াউল হক ইট ভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির অধীনে নিয়ে আসাকে একটি বিরাট অর্জন উল্লেখ করে শনিবার তিনি বলেন, ওই সব ইট ভাটায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বায়ুদূষণ কমে এসেছে। আমরা বাকি গুলোকেও দ্রুত পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির অধীনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
সারা দেশে মোট ৬ হাজার ৬৪৬ টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২২৭ টি ইট ভাটার মালিক তাঁদের ইট ভাটাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ‘জিকজ্যাক’, ‘হাইব্রিড হফম্যান’ অথবা ‘অটোমেটিক ট্যানেল’-এ রূপান্তরিত করে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির অধীনে নিয়ে এসেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখনও ২ হাজার ৫৪১ টি ইট ভাটা ৮০ থেকে ১২০ ফিট উচ্চতাসম্পন্ন গতানুগতিক চিমনি ব্যবহার করছে, যা বায়ুদূষণে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
জিয়াউল হক বলেন, গতানুগতিক ধারায় পরিচালিত ইট ভাটাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করতে, ইট ভাটা মালিক সমিতির সাথে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
সরকার ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩’ তৈরি করেছে, যা ইট প্রস্তুত করতে ইট কারখানায় গতানুগতিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে কার্যকর করা হয়।
এই আইনে ইট ভাটাগুলোতে জ্বালানী স্বাশ্রয়ী এবং তুলনামূলকভাবে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি যেমন ‘জিকজ্যাক’, ‘হাইব্রিড হফম্যান কিল্ন’, এবং ‘ভার্টিক্যাল শফট ব্রিক কিল্ন’ স্থাপন করতে বলা হয়েছে। আইনে আবাসিক, সংরক্ষিত, বাণিজ্যিক, কৃষি, বন, অভয়াশ্রম, জলাভূমি এবং পরিবেশগতভাবে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় ইট ভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ এলাগুলোতে ইট ভাটা স্থাপন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রাকৃতিক ক্ষতির মাত্রা অনুযায়ী অপরাধীদেরকে বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তি প্রদান করা হবে।
আবাসিক, সংরক্ষিত অথবা বানিজ্যিক এলাকায় ইট ভাটা স্থপন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
আইনে আরো বলা হয়েছে, কেউ ইট উৎপাদন করতে কৃষি জমি, পাহাড় বা গিরিপথ থেকে মাটি সংগ্রহ করে তা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫০টি ইট ভাটায় ‘আইন বাস্তবায়ন অভিযান’ পরিচালনা করে নয় কোটি টাকা জারমানা আদায় করা হয়েছে এবং এর পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৩০টি ইট ভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
আইনটিকে আরো বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী করতে, আইনে কিছু সংশোধনী আনার জন্য, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকায় ইট ভাটা স্থপনের উপর কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যদি ঐ বিধি-নিষেধগুলো দূর করা যায়, তাহলে ইট ভাটার মালিকরা পরিবেশ বান্ধব আধুনিক ইট ভাটা স্থাপনে আরো আগ্রহী
হবেন।