সোমবার, ১৯শে জুন, ২০১৭ ইং ৫ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ১৬, ২০১৭
news-image

---

নিউজ ডেস্ক : প্রতিবছরের মতো এবারো ঈদুল ফিতরের আগে বেতন ও বোনাস না পাওয়ার আশঙ্কা করছে কয়েক লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক। গত রমজানের ঈদেও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেতন ও বোনাস পায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে সাড়ে চার হাজার গার্মেন্টে ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশ শ্রমিক ঈদের আগে বেতন ও বোনাস পায় না। তাই ঈদ আসার আগেই তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করে এবং শঙ্কায় থাকে। তাই শ্রমিকেরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ২০ রোজার ভেতরে ন্যায্য বেতন-বোনাস ও ভাতাসহ প্রাপ্য সকল পাওনা পরিশোধের দাবি জানায় মালিকদের কাছে।

এবারো তাই হয়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিকের অভিযোগ থাকে মালিকেরা তাদের পাওনা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। ঈদের আগে মালিকেরা বিভিন্ন রাষ্ট্রে ঈদ ভ্রমণে যান আর শ্রমিকেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে। এমন পরিস্থিতিতে বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিকদের ভেতরে উদ্বেগ বিরাজ করতে থাকে। একইসঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের আবাসন, চিকিৎসা ও রেশনিংয়ের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দেরও দাবি জানায় শ্রমিকেরা।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর রোজার শুরুতে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং সব পোশাক শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু মালিকরা ঈদের ছুটির পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বোনাস-বেতন পরিশোধ না করে শ্রমিকদের জিম্মি করে রাখেন। শেষ মুহূর্তে মালিকরা বোনাস না দিয়ে বকশিস হিসেবে কিছু টাকা আর আংশিক বেতন দিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। শ্রমিকদের তখন প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ থাকে না। তাছাড়া ওই সময় শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলেও আইনশৃঙ্খলার অজুহাতে সরকার মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

সূত্র জানায়, লাখ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের ঘামের বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। অথচ জাতীয় বাজেটে তাদের জন্য আবাসন, চিকিৎসা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়নি। সরকার একদিকে মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন দমন করছে। অন্যদিকে তাদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় কোনো বরাদ্দ রাখছে না। যা সামাজিক বৈষম্য আরও ত্বরান্বিত করছে।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির আমার সংবাদকে জানান, শ্রমিকদের বেতন-বোনস নিয়ে আমরা চিন্তভাবনা করছি। আশা করছি ২০ রমজানের পর থেকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার প্রক্রিয়া আরম্ভ হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তাদের বেতন বোনাস সময়মত পরিশোধ করা হবে।

এদিকে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি মোশারেফা মিশু আমার সংবাদকে জানান, প্রতিবার গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমমন্ত্রণালয়ের শ্রমমন্ত্রী শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের যে প্রতিশ্রুতি দেন তা পূরণ করতে সক্ষম হন না। বেশিরভাগ সময় শ্রমিকেরা প্রতারিত হয়। তবে এবার আশা করি বিজিএমইএ‘র তত্ত্বাবধানে শ্রমিকদের পাওনা সময়মত পরিশোধ করতে পারবে মালিকেরা। তবে শ্রমিকদের বেতনের সমপরিমাণ টাকা বোনাস দেয়ার দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে বেতন-ভাতার জন্য গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ গার্মেন্টসগুলোর তালিকা তৈরি করে তা সমাধানের জন্য শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে ঢাকার আশপাশে ২শ’র বেশি গার্মেন্টস রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, প্রতি বছর রমজানের সময় রাজধানী, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্টস সেক্টরে বেতন-বোনাসের জন্য শ্রমিকরা আন্দোলন করে। তারা বিক্ষোভ ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। তাই এই বছর আগ থেকে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অস্থিরতা ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করেছে। ঢাকায় ও আশপাশ এলাকায় প্রায় দেড়শ গার্মেন্টস ও গাজীপুরের শিল্প এলাকায় ৭০ থেকে ৮০টি গার্মেন্টস রয়েছে। এসব গার্মেন্টসের তালিকা তৈরি করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।

সূত্র মতে, গার্মেন্টস সেক্টরে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে কৌশলে এই সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। তাই এবার আগ থেকে অস্থিরতা ঠেকাতে নানাভাবে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। তারা প্রতিদিনের খোঁজ-খবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছে।

এ দিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গার্মেন্টস সেক্টরের অস্থিরতা ঠেকাতে বেতন ভাতা দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সমস্যা হতে পারে এমন গার্মেন্টসের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠিয়েছেন। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এমডি/মানিক

এ জাতীয় আরও খবর