পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫০
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ধসের বীভৎস চেহারা আরো স্পষ্ট হচ্ছে। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ে-পাহাড়ে ছড়িয়ে আছে বিপর্যয়ের ক্ষতচিহ্ন।
গতকাল বুধবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাহাড়ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেই চলছে উদ্ধারকাজ। গতকাল পর্যন্ত রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ১০৬ জন, চট্টগ্রামের ৩৫ জন ও বান্দরবানে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রামে নিহতদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় ২৬ জন, চন্দনাইশে চারজন, রাউজানে দুজন, বাঁশখালীতে একজন ও চট্টগ্রাম নগরে দুজন রয়েছে। পাহাড়ধসের পাশাপাশি গাছ চাপা, দেয়াল চাপা ও পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাদের। খাগড়াছড়ি ও টেকনাফে নতুন করে পাহাড়ধসে মারা গেছে তিনজন। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই একই পরিবারের সদস্য। রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তাদের বাড়ি-ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। গত সোম ও মঙ্গলবার এসব এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ে। এখনো সব জায়গা থেকে ধসে পড়া মাটি সরানো যায়নি। সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় লোকজন উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি, ধস আর পাহাড়ি ঢলে পার্বত্যাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে মাটি পড়েছে সড়কের ওপরে। কোথাও সড়ক তলিয়ে গেছে। লোকজনের চলাচলের পাশাপাশি জরুরি পণ্য সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। রাঙামাটিতে অন্তত ২০টি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পুরো জেলায় বিদ্যুৎ নেই চার দিন ধরে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত আইপিএসের চার্জ শেষ। মোবাইল ফোনেও চার্জ নেই। ফলে দুর্গতরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ভূমিকম্পের গুজবে দুর্গত মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১টা থেকে ৪টার মধ্য ভূমিকম্প হবে—অজ্ঞাত সূত্র থেকে কে বা কারা এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়। আতঙ্কিত মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে দুর্ভোগ পোহায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা গতকাল দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন এবং সার্বিকভাবে তাদের সহায়তার আশ্বাস দেন।
সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল পাহাড়ি এলাকায়। সেই নিম্নচাপ না কাটতেই বর্ষার শুরুতে ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়ে আবহাওয়াবিদরা পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে ভূমিধসের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় ভূমিধসে আহতদের দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ৪৮৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ওই এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ডেনমার্ক এ প্রতিক্রিয়া জানায়। ইইউ বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
চট্টগ্রামে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ : পাহাড়ধস, বজ্রপাত ও দেয়ালধসে চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ জন হয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোরে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
রাঙ্গুনিয়ায় ইউএনও মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘উপজেলার ইসলামপুর ও রাজানগর এলাকায় পাহাড়ধসে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো দুজন নিখোঁজ আছে। ’
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জেলায় ৩৫ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গতকাল দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা এবং ৩০ কেজি চাল, আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে সাহায্য দেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার এবং সরকারি দল মাঠে আছে। দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সরকার দুস্থদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে। রাঙ্গুনিয়ায় ত্রাণ বিতরণের পর তিনি রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা দেন। এই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটি বিপর্যস্ত : রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৬ জন হয়েছে। দুর্গত সব জায়গায় এখনো উদ্ধারকাজ শেষ হয়নি। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। পুরো জেলায় চার দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। বৃষ্টি, ঢল ও ধসে যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রাঙামাটিতে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। দুপুরে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রাণ বিতরণকালে এ কথা বলেন তিনি। এ ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি না মেশানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, মানবিকতার সঙ্গে রাজনীতি যেন মেশানো না হয়। এটা দুর্যোগ, সবাইকে সম্মিলিতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে।
এর আগে তিনি শহরের মানিকছড়ি, শিমুলতলী, ভেদভেদীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং রাঙামাটি সদর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী ও অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ ৫০ লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
ওবায়দুল কাদেরের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও রাঙামাটিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
বিচ্ছিন্ন শহর, অন্ধকারে জীবন : রাঙামাটির শহরের অন্তত ২০টি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এমন বিপর্যয়ের মধ্যে টানা চার দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই পুরো জেলায়। আইপিএস ও মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি, শালবাগান, বেতবুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কোথাও সেতু, কোথাও সড়ক ধসে পড়ায় সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাঙামাটি জেলা। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-বান্দরবান, রাঙামাটি-কাপ্তাই, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক অচল হয়ে পড়ায় জরুরি পণ্য পরিবহন ও লোকজনের যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়েছে। সড়কের দুই পাশেই আটকে পড়েছে অসংখ্য মানুষ।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা জানিয়েছেন, ‘সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। সড়কগুলো স্বাভাবিক করতে ঠিক কত দিন লাগবে তা বলা কঠিন। তবে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। চট্টগ্রাম থেকেও কিছু গাড়ি ও যন্ত্রপাতি যোগ দিয়েছে আমাদের সঙ্গে। আমরা চেষ্টা করছি বিকল্প উপায়ে অন্তত জরুরি সড়কগুলো চালু করতে। ’
গুজব বাড়িয়েছে আতঙ্ক : পাহাড়ধসের পর মঙ্গলবার রাতে ভূমিকম্পের গুজবে রাঙামাটিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে রাত ৪টার মধ্যে ভূমিকম্প হতে পারে—অজ্ঞাত সূত্র থেকে এমন গুজব ছড়ানো হয়। ফেসবুক, মোবাইল ফোনে প্রচারের পাশাপাশি কয়েকটি মসজিদ থেকেও লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। আতঙ্কে বৃষ্টির মধ্যেই ঘর ছেড়ে বাইরে অবস্থান নেয় সাধারণ মানুষ।
রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ওসি মুহম্মদ রশিদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। খোঁজ নিচ্ছি কারা এসব অপপ্রচার চালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
৩৬ ঘণ্টা পর মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার : মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের কালাঘাটা গর্জন্যাতলীতে পাহাড়ধসে নিহত মা-মেয়ের মরদেহ গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলো কামরুন নেছা ও তাঁর মেয়ে সুফিয়া খাতুন। আট ফুট মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল তারা।
স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবান পৌর এলাকার গর্জন্যাতলীতে পাহাড়ধসে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল দিনমজুর আবদুল আজিজের কাঁচা ঘরটি। তার সঙ্গে চাপা পড়ে ছিল কামরুন নেছা ও সুফিয়া খাতুন। মঙ্গলবার ভোর থেকে ৩৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় লোকজন মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।
বান্দরবানে পাহাড়ধসে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রথম দিনই চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুরে বান্দরবানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল এবং আহতদের পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা বিপদে মানুষের পাশে আছি, তা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই ছুটে এসেছি। যত দিন দরকার, শেখ হাসিনার সরকার আপনাদের পাশে থাকবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করব। ’
বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগ গতকাল দিনভর সড়কের ওপর থেকে মাটি ও গাছ সরানোর কাজ করে বিভিন্ন সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করে। বর্তমানে সব রুট স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া তিন হাজারেরও বেশি দুর্গত মানুষকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, বান্দরবান পৌরসভা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারেনি।
খাগড়াছড়িতেও পাহাড়ধস, নিহত ১ : জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দুর্গম বর্মাছড়িতে পাহাড়ধসে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে সাতজন। তাদের মধ্যে তিনজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বর্মাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হরিমোহন চাকমা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরে দুর্গম দাদঙ্গাছড়া এলাকায় পাহাড়ধসে পরিমল চাকমা নামের একজন নিহত হন। পাহাড় ধসে তাঁর বাড়ি ও গোয়ালঘরের ওপর পড়ে। এতে তিনটি গরুও মারা যায়।
আর বর্মাছড়ির জয়প্রুতিমাপাড়ায় পাহাড় ধসে পড়ে সাতজন আহত হয়েছে।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটলেও দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় আহতদের উদ্ধার করা কঠিন হয় পড়ে।
উখিয়া-টেকনাফে বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩ : কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড়ধস ও বজ্রপাতে তিনজন মারা গেছে। মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়নের পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া গ্রামে পাহাড়ধসে বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো মোহাম্মদ সেলিম (৪২) ও কিশোমণি (৩)।
একই সময়ে উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের রুহুল্লার ঢেবা এলাকায় মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে আবুল কালাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান।
টানা বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার শহরসহ পুরো জেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করা হয়। কক্সবাজার শহরের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে প্রশাসন ও স্থানীয় লোকদের নিয়ে ৯টি পৃথক কমিটি গঠিত হয়েছে।
ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি কক্সবাজারের চকরিয়াকে প্লাবিত করে ভাটির দিকে নামতে শুরু করেছে। পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির চেহারা স্পষ্ট হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। নিচু এলাকাগুলোতে কয়েক হাজার ঘরবাড়িতে এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।