বুধবার, ২৮শে জুন, ২০১৭ ইং ১৪ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

রাজধানীর বনানী থেকে আরও চার যুবক ‘নিখোঁজ’

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ১৫, ২০১৭

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানী থেকে একই দিনে আবারও চার যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে তিন জন বনানীর একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। এই তিন জনের মধ্যে দুই জন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে বনানীতে দুইটি জিডি করা হয়েছে।

নিখোঁজরা হলেন: ইমাম হোসেন (২৭), তাওহীদুর রহমান (২৬), কামাল হোসেন (২৪) ও হাসান মাহমুদ (২৬)। বনানী থানা পুলিশ ওই চার যুবকের ফেসবুক আইডি বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে তাদের জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।

নিখোঁজদের মধ্যে ইমাম হোসেন ও হাসান মাহমুদ বনানীর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অনার্স করেন। কামাল হোসেন নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। তিনি বনানীর সি-ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৬৭/এ, মোস্তফা ম্যানসনের ৫ম তলায় ইন্টারকম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও টেলেক্স লিমিটেড নামে একই মালিকের দুইটি প্রতিষ্ঠানে বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন। নিখোঁজ হাসান মাহমুদ ঐ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। আর ইমাম হোসেন ঐ প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতেন। নিখোঁজ তাওহীদুর রহমানের বাসা মহাখালীতে। তার বাবা মহাখালী এলাকার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। নিখোঁজ চার জনের মধ্যে তাওহীদুর রহমান বাদে বাকি তিন জন চট্টগ্রামে একই পরিবারে বিয়ে করেছেন।

নিখোঁজের ঘটনায় ৩ জুন রাতে কামাল হোসেনের মামা রশিদ আলম বনানী থানায় একটি জিডি করেন। পরদিন ইমাম হোসেনের বাবা বিল্লাল হোসেন বনানী থানায় আরো একটি জিডি করেন। এই দুই জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন বনানী থানার এসআই বজলুর রহমান।

এসআই বজলুর রহমান জানান, গত ৩ জুন বনানী এলাকা থেকে টেলেক্স লিমিটেডের দুই কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ ও কামাল হোসেন নিখোঁজ হন। কামাল হোসেনকে খুঁজতে তার মামা রশিদ আহমেদ বনানীতে আসেন। ঐ দিন বিকালে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি মসজিদের সামনে ইমাম হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। ইমাম হোসেন তার কাছে কামালের একটি ছবি দেন। ঐদিন সন্ধ্যার পর থেকে ইমাম হোসেনও নিখোঁজ হয়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে ঐদিন সন্ধ্যায়ই তাদের আরেক বন্ধু তাওহীদুর রহমান নিখোঁজ হন।

তেজগাঁওয়ের মনিপুরী পাড়ার ৬ নম্বর গেট সংলগ্ন ১৪২/৪ নম্বর বাড়িতে ইমাম হোসেনের বাড়ি। তার বাবা বিল্লাল হোসেন পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরখানেক আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেন। ইমাম ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে পরবর্তীতে কম্পিউটার বিজ্ঞানেও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বনানীর টেলেক্স লিমিটেডে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরি নেন।

ইমামের ভাই মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল আহমেদ বলেন, কি কারণে তার ভাই নিখোঁজ হয়েছেন-তা তারা বুঝতে পারছে না। তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজধানীর কোনো থানায় মামলা এমনকি জিডি পর্যন্ত নেই। তার ভাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তবে তার মধ্যে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ছাপ কখনও দেখেননি।

নিখোঁজ হওয়ার আগে কামাল হোসেন থাকতেন গুলশানের কড়াইল বস্তির বড় মসজিদের মেসে। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মেসে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ। মেসের অপর সদস্যরা জানান, গত ৩ জুনের পর থেকে কামাল আর মেসে ফেরেননি।

পারিবারিক সূত্র জানায়, চাঁদপুরের মতলবের বাড়িভাঙ্গা গ্রামে কামালের বাড়ি। পিতার নাম আবুল কাশেম। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী। ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে কামাল বড়। দুই মাস আগে চট্টগ্রামে কামাল বিয়ে করেছেন।

বনানী থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, নিখোঁজদের মধ্যে কামাল, ইমাম ও হাসান মাহমুদ ২/৩ মাস আগে চট্টগ্রামে একই পরিবারে বিয়ে করেছেন। বনানীর টেলেক্স লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন। ঐ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিয়াউল হক বছরের বেশিরভাগ সময় মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন। মালয়েশিয়া থেকে ঐ প্রতিষ্ঠানটি তিনি দেখাশূনা করেন।

প্রসঙ্গত, গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থেকে একযোগে সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ঘরামি ও মেহেদী হাওলাদার নামে চার যুবক নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল মেহেদী হাওলাদার ও ২৮ মে সুজন ঘরামি ফিরে আসেন। ঐ বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার মাটিকাটা এলাকা থেকে কেয়ার মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থী ইমরান ফরহাদ ও ৫ ডিসেম্বর বনানী এলাকা থেকে সাঈদ আনোয়ার খান নিখোঁজ হন। এদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।

এ জাতীয় আরও খবর