দুই টাইগারের ব্যাটে সোফিয়া গার্ডেনে রচিত হলো লাল-সবুজের মহাকাব্য
---
স্পোর্টস ডেস্ক : এক যুগ পরে সেই কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে আবারও উড়ল বাংলাদেশের বিজয় নিশান। দুই টাইগার সাকিব আল হাসান আর মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ লিখলেন লাল-সবুজের বিজয়গাঁথা।
এমন অনন্য অসাধারণ বিজয় ক্রিকেট বিশ্ব মনে রাখবে অনেকদিন। দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচটা প্রায় হেরেই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন দুই ক্রিকেট শিল্পী। পঞ্চম উইকেটে ২২৪ রানের জুটি হলো। জোড়া সেঞ্চুরি করলেন সাকিব-রিয়াদ। দুজনের ব্যাটের শৈল্পিক মুর্ছনায় নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো। তার চেয়েও বড় কথা, চ্যম্পিয়নস ট্রফি থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হলো না মাশরাফি বাহিনীকে।
২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমেই টিম সাউদির পেস আক্রমণে মহাবিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ১২ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট তুলে নেন সাউদি। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তিনি এলবিডাব্লিউ করেন আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং ৯৫ রানের ইনিংস খেলা তামিম ইকবালকে (০)। তৃতীয় ওভারে তার শিকার হন সাব্বির রহমান (৮)। ৩ নম্বরে নেমে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন সাব্বির। উইকেটে সৌম্যর সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সবাই যেন পণ করেছে উইকেট বিলানোর। টানা তৃতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হন ড্যাশিং ওপেনার সৌম্য সরকার। সাউদির তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরার সময় সৌম্যর রান ৩। বাংলাদেশের রান ১২।
এমন সময় গ্যালারিতে আওয়াজ ওঠে ‘ধইরা খেল… মুশফিক…’। কিন্তু নিজের ৩০ তম জন্মদিনে মুশফিক উইকেটে টিকে থেকে দলকে ভরসা দিতে পারলেন না। মিলানের আগের বলটা সীমানা পার করলেও পরের বলেই মিডলস্টাম্প উপড়ে দিয়ে মুশফিককে (১৪) ফেরত পাঠান তিনি। পরাজয়ের লজ্জা যখন গ্রাস করছিল ঠিক তখন দলের হাল ধরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ। ৬২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন সাকিব। একটু পরেই ৫৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন মাহমুদ উল্লাহ। দুজনে শেষ পর্যন্ত তিন অংকে পৌঁছান। ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করেন সাকিব। জয় থেকে ৯ রান দূরে থাকতে ১১৫ বলে ১১ চার এবং ১ ছক্কায় ১১৪ রানে বোল্ড হয়ে যান সাকিব। এরপর ১০৭ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করে ১৬ বল হাতে রেখেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদ উল্লাহ। ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান।
এর আগে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে দারুণ বোলিং করেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম ২ ওভারে ১ রান দেন তিনি। বেদম মার খাওয়া মুস্তাফিজের জায়গায় বোলিংয়ে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে তরুণ এই পেসার লুক রঞ্চিকে (১৬) মুস্তাফিজের ক্যাচে পরিণত করেন।
উইকেট তুলে নেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন গতিতারকা রুবেল হোসেন। বিধ্বংসী কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে (৩৩) এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। তবে তৃতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং অভিজ্ঞ রস টেইলর। সতীর্থের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে কিউই দলনেতা (৫৭) রানআউট হলে ভাঙে এই জুটি।
চতুর্থ উইকেটেও ৪৯ রানের জুটি গড়েন নেইল ব্রুম এবং টেইলর। জুটি আরও বড় হওয়ার আগেই দ্বিতীয়বারের মত আঘাত হানেন তাসকিন। তার বলে বিপজ্জনক টেইলরের (৬৩) ক্যাচ নেন বোলিংয়ে নিষ্প্রভ মুস্তাফিজ। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। দলে ফিরেই ঝলসে উঠেন তরুণ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হেনে কিউইদর মিডল অর্ডার ছিন্নভিন্ন করে দেন। মোসাদ্দেকের করা ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে তামিম ইকবালের তালুবন্দী হন ৪০ বলে ৩৬ রান করা নেইল ব্রুম। ২ বল পরেই ০ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন কোরি অ্যান্ডারসন।
পরের ওভার করতে এসে আবারও আঘাত হানেন মোসাদ্দেক। ২৩ রান করা জেমস নিশামকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচে পরিণত করে তৃতীয় শিকার ধরেন তিনি। এরপর মঞ্চে আবির্ভাব আগের দুই ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে অ্যাডাম মিলানে ৭ রানে বোল্ড হয়ে যান। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রানেই থামে কিউইরা।