সোমবার, ১০ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৬শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় প্রাণ গেল ছয়জনের

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৩০, ২০১৭

---

নিউজ ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজার, রাঙামাটি ও ভোলায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গাছচাপায় চারজন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজন এবং মায়ের কোল থেকে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কক্সবাজার : আজ মঙ্গলবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়ের সময় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় গাছের নিচে চাপা পড়ে রহমত উল্লাহ ও সায়রা খাতুন নামের দুজন নিহত হন। এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে মরিয়ম বেগম নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহতদের মধ্যে রহমত উল্লাহর বাড়ি ডুলাহাজারা পূর্ব জুমখালী এলাকায়। আর সায়রা খাতুন বড় ভেওলা ইউনিয়নের শিকদারপাড়া এলাকার নুরুল আলমের স্ত্রী বলে জানা গেছে। বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের বাড়ি নুনিয়ারছড়া এলাকায়।

ওই বৃদ্ধার পরিবারের বরাত দিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, মরিয়ম আগে থেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। রাতে বাতাস শুরু হওয়ার পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আজ ভোর ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ওই সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজারে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গাছপালা।

কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে এসব বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। পানের বরজ ও ক্ষেত-খামারে ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

‘মোরা’র প্রভাবে সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। তবে জেলার আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এ কারণে কক্সবাজারের ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া দেড় লক্ষাধিক মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর আহমদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করলেও তাদের ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

টেকনাফের সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নূর হোসেন জানিয়েছেন, সাবরাং ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপ গ্রামে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল জানিয়েছেন, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনার ডেইল ও নাজিরারটেক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির মরিমাণ একটু বেশি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই বিবরণ এখনো হাতে আসেনি। তবে টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন, সাবরাং ও শাহ পরীর দ্বীপ, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ী এবং পেকুয়ার উজানটিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, ভোর ৫টার থেকে সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা কক্সবাজার অতিক্রম করতে শুরু করে। এ সময় টেকনাফে সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, সেন্ট মার্টিনে ১১৪ কিলোমিটার ও কক্সবাজার শহরে ৭৫ কিলোমিটার।

রাঙামাটি : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় রাঙামাটি শহরে উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন।

সকাল থেকেই শহরে হালকা ঝড়ো বাতাস শুরু হলেও দুপুর নাগাদ এর তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। এ সময় শহরের ভেদভেদিতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কারখানা এলাকায় একটি বাড়ির ওপর গাছ পড়লে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মাহিমা আক্তার (১৪)।

একই সময় শহরের আসাম বস্তি এলাকায় ঘরের ওপর পড়া গাছের চাপায় নিহত হন হাজেরা বেগম (৪৫) নামের এক নারী। এ সময় তাঁর ছেলেশিশু জুনায়েদ (৫) গুরুতর আহত হয়।

রাঙামাটি সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আবু তৈয়ব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঝড়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে পড়ে এবং অসংখ্য বাড়িঘরের চাল উড়ে গেছে। বর্তমানে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

ভোলা : আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মায়ের কোল থেকে কাদাপানিতে পড়ে গিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভোলার মনপুরা উপজেলার কলাতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, গতকাল রাতে কলাতলী গ্রামের মনির বাজারের পাশের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন সালাউদ্দিন ও তাঁর পরিবার। এ সময় মায়ের কোল থেকে কাদাপানিতে পড়ে রাশেদ নামের এক বছর বয়সী এক শিশু মারা যায়।

এ জাতীয় আরও খবর