মঙ্গলবার, ৯ই মে, ২০১৭ ইং ২৬শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ব্যয় আর সময় বাড়লেও কাজ শেষ হয়নি

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ২, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : নগরবাসীর জন্য অবর্ণণীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। অথচ এই ফ্লাইওভারের জন্য তিন দফা ব্যয় যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি সময়ও বাড়ানো হয়েছে। এটার কাজ কবে শেষ হবে, তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। শুরুতে এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪৩ কোটি টাকা। এখন তা বাড়তে বাড়তে ১২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

রাজধানীর যানজট নিরসনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের নকশা সংশোধন এবং নির্মাণকাজের সময়সীমা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৭-এর জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১১ থেকে ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রথম ধাপে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে তা ৭৭২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াল এক হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা।

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দুই অংশ খুলে দেয়া হয়েছে আগেই। রমনা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ ও ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস (মৗচাক ক্রসিং) পর্যন্ত ফ্লাইওভার এক কিলোমিটার অংশে যানবাহন চলছে। তিন অংশে প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটির এখনও কাজ বাকি ছয় কিলোমিটারের কাজ। তবে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক প্রশান্ত কুমার পাল।

এলোমেলো ও বিশৃঙ্খলভাবে কাজ চলছে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের। এতে করে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। ধীরগতিতে কাজ চলার কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী, স্থানীয় এলাকাবাসী এবং ফ্লাইওভারের আশপাশের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। বিশেষ করে রাজধানীর মালিবাগ ও মৌচাক এলাকায় কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া উঠানো হচ্ছে ফ্লাইওভারের গার্ডার। এর আগে গার্ডার ভেঙে নির্মাণ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেয়নি ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ। তাই ঝুঁকি নিয়েই নির্মিত ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক প্রশান্ত কুমার পাল বলেন, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকাটি ব্যস্ততম এলাকা। প্রতিদিন এই এলাকা দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি ও মানুষ যাতায়াত করে। এর মধ্য দিয়ে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ করা একটি চ্যালেঞ্জ। তবু আমাদের সাধ্য অনুযায়ী ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নিচে বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে উপরে ৪ কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। তাই উপরে নিরাপত্তা জালের ব্যবস্থা করা কঠিন। তবুও আমাদের শ্রমিকরা যথাসাধ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নির্মাণ করছেন। আশা করা হচ্ছে আগামী জুনের মধ্যে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হবে।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণকাজের জন্য রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অনেক গর্ত। গর্তগুলোতে সব সময় পানি জমে থাকে। নোংরা কাদা থাকার কারণে পায়ে হাঁটা পথচারীরা এমনকি রিকশা-গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা।

এলাকাবাসী বলেন, ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের কারণে এ এলাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই। মালিবাগ-মৌচাকের নাম শুনলে মানুষ এখন ভয় পায়। আমাদের ক্রেতারা এখন আর এদিকে আসে না। তাই আমাদের বিক্রি এখন অনেক কমে গেছে। অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। কাওসার নামের এক ব্যক্তি বলেন, মানুষের জন্য আতঙ্কের এক নাম হচ্ছে মালিবাগ-মৌচাক। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এ এলাকা এখন হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এখন আর কেউ এই এলাকায় আসেন না। আর রিকশা গাড়ি ঠিকমতো চলে না। ধুলিবালির কারণে এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের পরিমাণ হাজার গুণ বেড়ে যায়। আশপাশের সবকটি মার্কেট ক্রেতাশূন্যতায় ভুগছে। তাই বিক্রি অনেক কমে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, কাজ শেষ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে আমরা অক্টোবরে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। নির্মাণকাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও ডিপিডিসির কাজ চলছে। যার কারণে সমস্যা একটু বেশি হচ্ছে।

এ জাতীয় আরও খবর