হাওর অঞ্চলের মাছ মরার কারণ ভারতের ইউরেনিয়াম খনির তেজস্ক্রিয়তা !
গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ এক আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে হাওর অঞ্চলের সব ধান। বছরে ওই একটা মাত্র ফসলই উঠে হাওর অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে। হঠাৎ এই দুর্যোগে যখন তাদের মাথায় হাত তখন গত সপ্তাহ থেকে হাওরের পানিতে ভেসে উঠতে থাকে মরা মাছ।
মাছও হাওর অঞ্চলের মানুষের এক প্রধান সম্পদ। ভেবেছিল ধান গেছে, মাছ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে এবার অনেক। কিন্তু এ কী হলো হঠাৎ? ঝাঁকে ঝাঁকে মরা মাছ ভেসে উঠছে হাওরের পানিতে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল ধান পঁচে তার থেকে গ্যাস ছড়িয়েছে তার কারণেই বুঝি মাছগুলো মরে যাচ্ছে। কিন্তু, এখন অনুমান করা হচ্ছে অন্য কারণ।
আসলে মেঘালয় সীমান্তের কাছে ভারতের উন্মুক্ত ইউরেনিয়াম খনিরতেজস্ক্রিয়াতা ছড়িয়েই হাওরের মাছ, ব্যাঙ মারা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মারা যাচ্ছে হাওরের পানিতে চড়ে বেড়ানো গৃহপালিত হাঁসও। সেই সব অঞ্চলে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সেই সব মরা মাছ যেন কেউ না খায়।
ব্যাপারপটা যদি সত্যিই হয় তাহলে অনিবার্যভাবে নেমে আসবে ভয়ঙ্কর এক মানবিক বিপর্যয়। হয়তো হাওরের অঞ্চলের মানুষের দেহেও ছড়িয়ে পড়তে পারে মারাত্মাক তেজস্ক্রিয়াতা। আর তাতে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগে।
মেঘালয় রাজ্য সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিন্দু এম লানং অবশ্য জানিয়েছেন, ইউরেনিয়ামের কারণে কোনো প্রাণীর মরে যাবার সম্ভাবনা নাই। তাহলে উক্ত অঞ্চলের কেনো প্রাণীই বাঁচতো না।
কিন্তু, খাসিয়া নেতা মারকোনি থংনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি ইউরেনিয়ামের কারণেই এই মাছগুলো মারা যাচ্ছে। পানির রঙও বদলে গেছে। আমরা গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি।
কারণ, রানিকোর নদীর কাছে যেখানে ভারতীয় ইউরেনিয়াম খনি সেখানে নদীর পানিও একই রঙ ধারণ করেছে এবং তখনও ওখানে অনেক মাছ-ব্যাঙ ভেসে উঠতে দেখেছি।
ঢাকার আণবিক শক্তি কমিশনের প্রধান ড. বিলকিস আরা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইউরেনিয়ামের কারণেই পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণেই পানির নিচের মাছ-ব্যাঙ মারা যাচ্ছে। সাধারণত ধান পঁচে যে আমোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয় তাতে এতো মাছ মারা যাওয়ার কথা নয়।
পরীক্ষার জন্য এখনো সেখানকার পানি আনা হয়নি বলে তিনি জানান। তবে মৎসবিভাগের একদল কর্মী হওর অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।
সুনামগঞ্জ টাঙ্গোয়ার হাওরের কাছে বাংলাদেশ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে রানিকোর মেঘালয় সীমান্তে ইউরেনিয়াম কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইউসিআএল) অবস্থিত। বছরে এখান থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন ইউরেনিয়ামস আকরিক আহরণ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ টন। উম্মুক্ত এই ইউরেনিয়াম খনি নানাভাবেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় করে থাকে। খাসি সম্প্রদায়ের ছাত্র সংগঠন সেই ১৯৯২ সাল থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। কিন্তু, কোনো প্রতিবাদেই কোনো কাজ হয়নি। ডেইলি স্টার থেকে অনূদিত,