বাঞ্ছারামপুরে স্বপ্নের ‘ওয়াই সেতু’র উদ্ধোধনের অপেক্ষায় ৩ উপজেলাবাসী
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর : আগামী মাসেই এশিয়ার সর্ববৃহতওয়াই সেতু উদ্ধোধন হতে যাচ্ছে।উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ব্রীজটি দেখতে ইংরেজী ওয়াই আকৃতির বলে এর নাম হয়েছে ওয়াই সেতু।১শত ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ত্রিমুখী ব্রীজটি নির্মান করা হয়েছে।এখন চলছে শেষ মুহুর্তের ফাইনাল লেভেলিং এর কাজ।ধোয়ামুছা-ছোট খাট ত্রুটি বিচ্যুতি রংকরন এসব।ব্রিজটি নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শ্রামা প্রসাদ অধিকারী বুধবার মুঠোফোনে জানান,-প্রধানমন্ত্রী আমাদের তারিখ নির্ধারন করে দিলেই আমরা জনসাধারনের জন্য এই বৃহত ব্রীজটি জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিবো।
ওয়াইসেতুটি সরকারের এলজিইডি ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে বৃহত প্রকল্প।প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন মো.আবু ফাত্তাহ (মিডিয়া) ও আবদুস সালাম মন্ডল।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান,‘বেশ কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব যে কিছু ছিলো না তা আমরা বাঞ্ছারামপুরের ওয়াইসেতুটি তৈরী করে প্রমাণ করে দিয়েছি’।
আগামী মে মাসের যেকোন দিন উদ্ধোধন করা হতে পারে এশিয়ার সর্ববৃহত এই ওয়াইসেতু-জানান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদ্প্তরের মিডিয়া প্রধান(পিডি পদমর্যাদা)আবু ফাত্তাহ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর,কুমিল্লার মুরাদনগর,তিতাস,হোমনা-চান্দিনা উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠেী এই ব্রীজটি চালু হলে । এ সেতুটি চালু হবার পরই যান চলাচলে আরও দেড় ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা সময় কমে আসবে উল্লেখিত উপজেলাগুলোর অভ্যন্তরীন ও জাতীয় সড়কে সংযোগ যোগাযোগে- বলে জানান স্থানীয় সংশ্লিষ্টরা। একইভাবে ভবিষ্যতে যদি কখনো চার লেনের যান চলাচল করতে চায় সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সেতুটিতে।খোজ নিয়ে জানা গেছে,সেতুর উপর দিয়ে কোন প্রকার যানজট সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।ফলে অনায়াসে ব্যবসায়ীরা যে কোনো সময় বাস-ট্রাক-বিভিন্ন হেভিলোডেড পরিবহন চলাচলের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের সময় এবং যাত্রী হয়রানিও কমবে ওয়াইসেতুর কারনে। এ সেতু পুরোপুরি চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এর আগে পূর্বে উল্লেখিত উপজেলাগুলোর বাসিন্দাসহ ব্যবসায়ীরা পন্য পরিবহনসহ যাত্রী পরিবহন হতো লঞ্চ,নৌকা,ইনজিন চালিত নৌকা,গ্রাম টু গ্রাম যোগাযোগ স্থাপিত হতো বাঁশের সাঁকো,কাঠের সাঁকো,খেয়া পারাপার বা পায়ে হেটে।
এ নিয়ে চলাচলরত ভ্রমণকারীদের সময় কমানোর পাশাপাশি সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে আরও এক ধাপ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রকৌশলী এবিএম খোরশেদ আলম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, ‘ওয়াইব্রীজের অ্যাপ্রোচসহ ১ শত ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে পুরোটাই কোটি টাকা দেয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে সেতুটির ৯৮ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ওয়াইসেতু চালু হলে আরও অন্তত ১ ঘন্টা ১০ মিনিট সময় কমবে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে বাঞ্ছারামপুর আসতে। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক,শিক্ষা,বাসস্থান উন্নয়নেও সেতু দুটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান। স্থানীয় সরকার,সড়ক ও জনপথসহ জনপ্রতিনিধি,বিভিন্ন প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,এদত (৩ উপজেলা)এলাকায় কখনো সড়ক পথের যোগাযোগের সড়ক পথ স্থাপন করা হবে তা তারা কষ্মীনকালেও ভাবেননি।কিন্তু,সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম এমপি।তিনি ১৯৯০ সাল থেকেই একটি স্বন্পের সেতু তৈরী করতে পরিকল্পনা করথে থাকেন বলে ক্যা.তাজ এমপি জানান। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর-হোমনা জোনে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭৩ সালে স্বপ্ন দেখেন শুরু করেন ক্যা.তাজ।কিন্তু,তখন তিনি যুবক ও ক্ষমতাও ছিলো না স্বপ্ন বাস্তবায়নের।তারউপর আর্মিতে চাকুরীরত।পরে,প্রথম দফায় এমপি হবার পর স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটু একটু এগোতে থাকেন।৯০ দশকের আগে ক্যা.তাজ তার এলাকায় তিনি যখন একটি লঞ্চের মালিক (লঞ্চটির নাম ছিলো এম.ভি বাঞ্ছারামপুর,যে লঞ্চটি নিয়মিত বাঞ্ছারামপুর-ঢাকা-হোমনা লঞ্চ ঘাট-মুরাদনগররের রামচন্দ্রপুর লঞ্চ ঘাটে যাত্রী বহন করতো) সেই লঞ্চে করে তিনি প্রায় ঢাকা থেকে তার নিজের লঞ্চ দিয়ে তার জন্মস্থান বাঞ্ছারামপুরে আসতেন।সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যা. তাজুল ইসলাম (অব.) জানান,-‘রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে এলাকা সফরে আমি লঞ্চেই যাতায়াত করতাম’।তিনি বলেন,-সে লঞ্চে বসেই তিনি দৃঢ় প্রতিঙ হোন লঞ্চে নয়,তিন উপজেলার বাসিন্দাদের জন্য সসরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের উপায় বের করে সড়ক পথ তৈরী করলে এলাকার অর্থনৈতিক,শিক্ষাসহ সবদিক থেকে উন্নতি ঘটবে এবং তিনি তা ঘটিয়েই ছাড়বেন। যা অবশেষে বাস্তাবায়িত হলো। দীর্ঘ ৪০ বছর পর ৩ উপজেলাকে সংযুক্ত করতে এই ওয়াইসেতুর নির্মাণের কাজ শুরু করেন সেই ২০০৮ সাল থেকে।সরকারের গত টার্মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হয়েও কেবল ব্রীজটির খবর রাখার জন্য প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে এলাকায় এসেছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য মতে,ব্রীজটির সুফল তুলতে তৃতীয় মেঘনা সেতু (আড়াইহাজারের গোপালদী টু বাঞ্ছারামপুর ,২ কি.মি. দৈর্ঘ্য প্রায়)নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।যা সম্প্রতি সংসদে যোগাযোগ ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্পষ্ট বলেছেন ২০১৭ সালের মধ্যেই ৩ য় মেঘনা সেতুর নির্মান কাজ শুরু হবে।আর অর্থ দেবে চীন।
ইতোমধ্যে এলাকার ১০ লাখ মানুষ উদ্ধোধনের আগেই ব্রীজটি দিয়ে হাল্কা যান চলাচল শুরু করে দিতে গেছে।পায়ে হেটে যাচ্ছে প্রতিদিনি ¦কে উপজেলা থেকে আরেক উপজেলা যাচ্ছে হাজারো মানুষ। ফলে ব্রীজটির উপকার পেতে শুরু করেছে এলাকার প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ।
সবাই অপেক্ষায় আছে কখন বঙ্গবন্ধু কন্যা ব্রীজটি উদ্ধোধনর করবেন।