শুক্রবার, ২১শে এপ্রিল, ২০১৭ ইং ৮ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মোবাইল-ল্যাপটপের ফরেনসিক পরীক্ষা চায় পুলিশ

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ১১, ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে মৃত্যুবরণ করা মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের মোবাইল ও ল্যাপটপের ফরেনসিক পরীক্ষা করতে চায় পুলিশ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক পরীক্ষাগারে মোবাইল ও ল্যাপটপটি পরীক্ষা করা হলে রাউধার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সিআইডির পরীক্ষাগারে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য রাউধার মোবাইল ও ল্যাপটপ ঢাকায় পাঠাতে হবে। এ অনুমতি পেতে এরই মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ আবেদন করেছেন। রাজশাহী মহানগর আদালতের পরিদর্শক আবুল হাসেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবুল হাসেম জানান, আবেদনটি তারা রবিবার সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছেন। পরে সোমবার দুপুরে সেটি রাজশাহীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দাখিল করা হয়েছে। তবে এ দিন আবেদনের শুনানি হয়নি। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে আদালতে শুনানি হতে পারে। রাউধার লাশ উদ্ধারের দিন তার এই মোবাইল ও ল্যাপটপ পুলিশ জব্দ করেছিল।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম বলেন, রাউধার মৃত্যুর পরও দু’একদিন তার ফেসবুক ও ইনস্ট্রাগ্রাম আইডি খোলা ছিল। এরপর আইডিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন। এ জন্যই মোবাইল ও ল্যাপটপের ফরেনসিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ল্যাপটপ ও মোবাইলের পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে, যা মৃত্যুর কারণ উৎঘাটনে সহায়ক হবে।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন রাউধা আতিফ। গত ২৯ মার্চ কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধা আতিফের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে শাহমখদুম থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে।

একজন উঠতি মডেল হিসেবে রাউধা আতিফের ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ভারতের বিখ্যাত ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ সাময়িকীর প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী মালদ্বীপের ‘নীলনয়না’ এই মডেল। তার মৃত্যুর পর লাশ দেখতে রাজশাহী আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং মা-বাবাসহ ৮-৯ জন নিকটাত্বীয়।

এরপর গত ৩১ মার্চ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ভিসেরা রিপোর্ট না পেলেও পরদিন ময়নাতদন্ত বোর্ড প্রতিবেদন জমা দেয়- রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। পরে ওই দিনই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীতে রাউধার দাফন সম্পন্ন হয়। এরপর গত ৫ এপ্রিল রাউধার মা আমিনাথ মুহাররিমাথ ও ছোট ভাইসহ চারজন দেশে ফিরে যান। তবে বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফসহ বাকিরা এখনও আছেন রাজশাহীতে।

এর আগে গত ৩ এপ্রিল রাউধার মৃত্যুর ‘তদন্ত’ করতে মালদ্বীপের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক আলী আহমেদ রাজশাহী আসেন। তারা রাউধার লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, রাজশাহী পুলিশ, রাউধার সহপাঠি, শিক্ষক এবং হোস্টেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে গত ৭ এপ্রিল তারা দেশে ফেরেন।

এরপর সোমবার রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত এজাহারটি আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নগরীর শাহমখদুম থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সোমবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো কাগজ হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন ওসি।

মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আতিফ দাবি করেছেন, তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় রাউধার সহপাঠি সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সিরাতের বাড়ি ভারতের কাশ্মিরে। মামলা দায়েরের পর আদালতে মোহাম্মদ আতিফ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, এমন অনেক প্রমাণ তিনি পেয়েছেন। এ জন্যই তিনি মামলা দায়ের করলেন। এ সময় তার হাতে কাগজের একটি প্ল্যাকার্ড ছিল। সেখানে ইংরেজিতে লেখা ছিল- আমি আমার মেয়ের মৃত্যুর নায্য তদন্ত ও বিচারের আবেদন করছি। একজন বাবার আবেদন।