`কাটার মাস্টার`কে ভোলেনি হায়দরাবাদবাসী
স্পোর্টস ডেস্ক :টেস্টে লম্বা স্পেলে বল করার মতো এখনোও ফিট হয়ে উঠতে পারেননি। তাই ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক একমাত্র টেস্টে ছিলেন না মুস্তাফিজ। তার না থাকাটা বড্ড ক্ষতি করেছে বাংলাদেশের! শুধু তাই নয় লাখ লাখ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সমর্থকদেরও হতাশ হতে হয়েছে। প্রিয় তারকা দলে নেই দেখে স্টেডিয়ামে আসেননি হায়দরাবাদের অনেক ক্রিকেট সমর্থক!
আইপিএলে খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও হায়দরাবাদের মানুষের মাঝে সেতু বন্ধন তৈরি করেছেন মুস্তাফিজ। আইপিএলের শুরুতে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ঘিরে। তাও সাকিবের কারণে। সেই আগ্রহ আরও ছাড়িয়ে যায় মুস্তাফিজ হায়দরাবাদে নাম লেখানোর পর থেকে।
মুস্তাফিজের দল হায়দরাবাদে প্রথম টেস্ট খেলাতে হায়দরাবাদের মানুষের খুশির সীমা ছিল না। অনেকের কাছে বাড়তি পাওনা হিসেবে এসেছিল কাটার মাস্টারের খেলা দেখা। কিন্তু সেই আগ্রহে ভাটা পড়ে মুস্তাফিজকে দলের সঙ্গে না দেখে। এমনকি ছুটির দিনগুলোতে দর্শকের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি স্টেডিয়ামে।
তবুও রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের ২২ গজে না থেকেও মুস্তাফিজ হায়দরাবাদ টেস্টে ছায়া হয়ে ছিলেন প্রত্যেকটি ভক্তের হৃদয়ে। হায়দরাবাদের সমর্থকরা অনেকেই জানতেন না দলে নেই তরুণ এই বিস্ময় বালক। যারা জানতেন না মাঠে এসে তাদের যারপনাই হতাশ হতে হয়েছে। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মুস্তাফিজকে দলে না দেখে। পরে যখন জেনেছেন ইনজুরিতে আক্রান্ত মুস্তাফিজ। তখন শুভকামনা জানাতে মোটেও কার্পণ্য করেননি।
হায়দরাবাদের মানুষের আগ্রহ মূলত বেড়েছে মুস্তাফিজের আইপিএল বাজিমাত। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএলে খেলে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই হায়দরাবাদবাসী ভক্ত বনে গেছে মুস্তাফিজের।
মুস্তাফিজের দ্যুতির চূড়ান্ত রূপায়ন হয় আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে। ওই আসরে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতার পাশাপাশি হায়দরাবাদবাসীর মনও জয় করে ফেলেন তিনি।
তাই বাংলাদেশের এই কাটার মাস্টারকে হায়দরাবাদবাসী কতটা ভালোবাসে, টেস্টের পাঁচদিনে প্রতিটি মুহূর্তেই তা স্পষ্ট হয়েছে। হায়দরাবাদের রাজ শেখর নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ম্যাচের চতু্র্থ দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এই ম্যাচে যদি মুস্তাফিজ খেলতো। তবে ভারত প্রথম ইনিংসে এত রান করতে পারতো না। বাংলাদেশের ম্যাচটি জেতার সম্ভবনা তৈরি হতো।’
এদিকে হায়দরাবাদের শহরে ট্যাক্সি চালান ওমর কাশেম। তিনি মুস্তাফিজের বেজায় ভক্ত। গত কয়েক মাস ধরেই অপেক্ষা করছিলেন মুস্তাফিজের খেলা মাঠে বসে দেখবেন বলে। কিন্তু মুস্তাফিজ না আসাতে হতাশ হতে হয়েছে এই ট্যাক্সি চালককে।
এমন অনেক ওমর কাশেম আছেন হায়দরাবাদ শহরের আনাচে কানাচে। যারা মুস্তাফিজকে এক পলক দেখতে কিংবা সামনে থেকে তার বোলিং দেখতে মুখিয়ে ছিলেন। আইপিএলে তার চার ওভার বোলিং দেখে সন্তুষ্ট ছিলেন না কেউই! কারণ মুস্তাফিজের কাটার হায়দরাবাদবাসীর মনে ভালোই দাগ কেটে ছিল।
ঠিক তেমনই একজন ছিলেন হায়দরাবাদ রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের কিউরেটর চন্দ্রশেখর। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন মুস্তাফিজকে। বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের ভেন্যু হায়দরাবাদ হওয়ার পর থেকেই তিনি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু মুস্তাফিজ না আসাতে মন খারাপ হয় চন্দ্রশেখরের।
একই ইস্যুতে টেস্টের শেষ দিন স্টেডিয়ামে প্রবেশ পথে বেশ কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা হয়। পথে রনিজিত নামের একজন স্থানীয় বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনে মুস্তাফিজ সম্বন্ধে জানতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘মুস্তাফিজ এখানে (হায়দরাবাদে) খুবই জনপ্রিয়। সে আসলে শুধু তার খেলা দেখার জন্য অনেকেই মাঠে আসতেন।’
ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে বিরাট কোহলি ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে গেছেন। প্রেসবক্স থেকে বের হয়ে করিডোরে আসতেই দেখা মিললো এক সিকিউরিটি অফিসারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘তোমাদের মুস্তাফিজ থাকলে কোহলির দুইশো রান হতো না। তার সঙ্গে এবার একটি ছবি তোলার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হলো না।’
এদিকে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অন্যতম কর্মকর্তা ভেঙ্কটরামন মুস্তাফিজ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘মুস্তাফিজ বাংলাদেশ দলে থাকলে ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারতো। এই শহরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাব আছে। এই ছেলেটাকে সবাই পছন্দ করেছে। মুস্তাফিজ দলে থাকলে দর্শকদের সংখ্যাটা আরও বাড়তো।’
গ্যালারিতে থাকা দেবালোক চ্যাটার্জি বলেছেন, ‘এই মাঠে মুস্তাফিজ অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে। যার কারণে উইকেটটা বেশ ভালো ভাবেই চেনা তার। দলে থাকলে বাংলাদেশ দল ভীষণ ভাবে উপকৃত হতো। দর্শকরা আনন্দ পেতো তার খেলা উপভোগ করে।