রমনায় বোমা মামলা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৬ বছর আগে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানসহ আট আসামির ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ রোববার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ বলেন, পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু হয়েছে।
পেপারবুকে মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, বিচারিক আদালতের রায়সহ পূর্ণাঙ্গ বৃত্তান্ত থাকে।
২০০১ সালে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে হত্যা করা হয় ১০ জনকে। হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে এই মামলার আসামি করা হয়।
হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্যরা হলেন আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আব্দুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, পেপারবুকের তথ্য অনুসারে ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামি এখনো পলাতক। তাঁরা হলেন তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, আবু বকর, শফিকুর ও আবদুল হাই।
রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে সাতজনের করা ছয়টি আপিলের শুনানি হবে। এর মধ্যে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন, সুমন, শাহদাত উল্লাহ ও আবু তাহের পৃথক আপিল করেছেন। তবে শেখ ফরিদ ও মো. ইয়াহিয়া দুজন মিলে করেছেন একটি আপিল। সঙ্গে রয়েছে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন ও সুমনের জেল আপিল।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন।
এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা হলেও অন্য মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
ঘটনার প্রায় আট বছর পর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়। পরে বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথকভাবে মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এ এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ না হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী মামলা দায়রা আদালতে ফেরত যায়। ফলে হত্যা মামলাটি আবার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে স্থানান্তর হয়। প্রথম আলো