শনিবার, ৭ই জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৪শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

যেভাবে শেষ হলো শীর্ষ জঙ্গি মারজানের অধ্যায়

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৬, ২০১৭

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার অপারেশন কমান্ডার ছিল ওই ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজান। গুলশানে হামলার সময় সে ছিল মিরপুরের একটি আস্তানায়। সেখান থেকে হামলাকারী ৫ জঙ্গিকে নানা নির্দেশনা দিচ্ছিল সে। নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরীর সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিল। কিছুক্ষণ পর পরই তামিমকে হামলার খবর জানাচ্ছিল। হলি আর্টিজানে অপারেশনের পুরো ছকও আঁকে মারজান। তার সরাসরি তত্ত্বাবধানেই হলি আর্টিজানে হামলা হয়। শুধু হলি আর্টিজানই নয়, শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলাতেও অপারেশন কমান্ডারের ভূমিকা পালন করে সে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, মারজানের আইডিতে গুলশান হামলার ছবি পাঠানো হয়েছিল। গোপন টেক্সট বা অ্যাপসের মাধ্যমে এই ছবি পাঠায় হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা।

মারজান বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে গুলশান হামলার ছবি পাওয়ার পর তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে। নিউ জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মারজান সংগঠনের প্রচার বিভাগের দায়িত্বও পালন করে আসছে।
হামলার পর পরই জিম্মিদের গুলিবিদ্ধ ছবি বিশেষ অ্যাপসে মারজানের কাছে পাঠানো হয় হলি আর্টিজানের ভেতর থেকে। তখন মারজান জঙ্গিদের নির্দেশ দেয় প্রত্যেককে গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করতে। এরপর জিম্মিদের গুলি করার পাশাপাশি গলা ও পেট কাটা শুরু করে জঙ্গিরা। সেই ছবি আবার তার কাছে পাঠায়। তা দেখে প্রশংসা করে মারজান। হত্যাযজ্ঞের একপর্যায়ে জঙ্গিদের মোবাইলে ‘ধন্যবাদ’ লিখে এসএমএসও পাঠিয়েছিল সে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর রায়েরবাজার বেড়িবাঁধের কাছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ এ জঙ্গি নিহত হয়। এসময় সাদ্দাম নামে তার এক সহযোগীও মারা যায়।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কয়েকটি সড়কে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। রাত আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে একটি মোটরসাইকেলে দুজন যাচ্ছিল। তাদের একজনের পরনে ছিল খয়েরি রঙয়ের গেঞ্জি ও জ্যাকেট। আরেকজনের গায়ে ছাই রঙয়ের গেঞ্জি ও আকাশী রঙয়ের জ্যাকেট।

তাদের দেখে সন্দেহ হলে থামতে বলে পুলিশ। তবে তারা মোটরসাইকেল না থামিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ২ থেকে ৩ টি গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় তারা মাটিতে পড়ে যায়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরে ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এরা মারজান ও সাদ্দাম।

এদিকে এখন সব মহলে আলোচনা চলছে শীর্ষ এ জঙ্গি এদিন কোথায় অবস্থান করছিলো। সে এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল?

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে নব্য জেএমবির গ্রুপটি। রাজধানী ও এর পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যে দ্রুত আস্তানা পরিবর্তন করে।

উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, মারজান এতদিন কোথায় ছিল তা এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে আমাদের কাছে তথ্য ছিল মারজান মোহাম্মদপুরে থাকতে পারে, সেই তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা রাতে অভিযান চালায়।