রবিবার, ৮ই জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৫শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ এপ্রিলে

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৫, ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৮৯০ সাল অর্থাৎ আজ থেকে ১২৭ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে পরিকল্পনা, পাকিস্তান আমলে (১৯৫৮ সাল) সমীক্ষা পরিচালনার পর চলতি বছরে শুরু হচ্ছে দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। আগামী এপ্রিল মাসে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। তবে সব কিছু পরিকল্পনা এগিয়ে গেলে মার্চ মাসেও কাজ শুরু হতে পারে এই মেগা প্রকল্পের।

 

সূত্র মতে, চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার তথা তা মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত রেল যোগাযোগ গড়ে তুলতে প্রথমে মিটার গেজ চিন্তা থাকলেও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত বদলে ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ শুরু হচ্ছে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার মেগা এই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে পাঁচ দেশের ৯ কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছে

পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করা এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসেবে তা মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ১৮৯০ সালেরই। বর্তমানে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রুট’ এই থিমকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া চীন চট্টগ্রাম দিয়ে বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার) অর্থনৈতিক করিডরের কাজ করতে চায়। আর এ লক্ষ্যে চীনও চায় দ্রুত বাস্তবায়ন হোক এই রেললাইন।

আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও দেশের প্রয়োজনের সমন্বয়ে ১৯৫৮ সালে সমীক্ষা চালানো রেললাইন প্রকল্পটি গতি পায় গত বছর। দ্রুতভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া প্রকল্পটির নকশাও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। গত নভেম্বরে রেলপত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহউদ্দিন ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিসে এক সমন্বয় সভায় বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। আমরা দ্রুত এর নির্মাণ কাজ শেষ করতে চাই। এ জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। আগামী মার্চে হয়তো এর নির্মাণ কাজ শুরু করা যেতে পারে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’

একই বৈঠকে দোহাজারি-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মাহবুবুল হক বকশী বলেছিলেন, ‘১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-ঘুমধুম প্রকল্পের কাজ দুই ধাপে বাস্তবায়ন হবে। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত করা হবে পরের ধাপে। প্রকল্প এলাকায় সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর বিষয় সংরক্ষিত বন এলাকায় হাতি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হবে। এসব জায়গাগুলোতে আন্ডারপাস বা ওভার পাস দেয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে অনেক গাছ কাটা পড়বে। এ জন্য প্রকল্প শুরুর আগেই দুই লাখ গাছ লাগানো হবে।’

প্রকল্পের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ২৮ নভেম্বর ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। নির্মাণ কাজের সুবিধার জন্য পুরো প্রকল্পটিকে দুটি লটে (দোহাজারি থেকে চকরিয়া- লট ১, চকরিয়া থেকে কক্সবাজার- লট ২) ভাগ করা হয়েছে। প্রথম লটে দরপত্র জমা পড়েছে ৫টি ও দ্বিতীয় লটে ৪টি।’

জমা পড়া ৯টি দরপত্রের মধ্যে কোন দেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশি দরপত্র জমা দিয়েছে জানতে চাইলে মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি দরপত্র জমা পড়েছে চীনা কোম্পানির। এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, স্পেন ও কোরিয়ার একটি করে প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে।’

মফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দরপত্র যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। যদি এসব কাজ মার্চের মধ্যে শেষ করা যায় তাহলে হয়তো মার্চের শেষ দিকে বা এপ্রিলে কাজ শুরুর আদেশ দেয়া যেতে পারে। এছাড়া নকশা ও ভূমি অধিগ্রহণে তেমন কোনো কাজ বাকি নেই।’

প্রকল্পটির বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন ও চট্টগ্রামের সাগর পাড় দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি সড়ক পথ হলে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত যাতায়াত সহজ হবে। তখন বিসিআইএম করিডর হিসেবে চট্টগ্রাম ব্যবহৃত হবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যাবে। যদিও চীন-ভারত ভূরাজনীতির অংশ হিসেবে এতোদিন তা ধীরে চলো নীতিতে চলছিল।’

প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। দোহাজারি-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথে ১১টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এগুলো হল: দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও ঘুমধুম। রামু থেকে একটি অংশ চলে যাবে কক্সবাজারের দিকে এবং অপর অংশ যাবে ঘুমধুমের দিকে।

রেলপথ নির্মাণে ৫২টি মেজর ও ১৯০টি মাইনর রেল সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি ১১৮টি লেভেল ক্রসিং ও ২টি আন্ডারপাস থাকবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় হাতি চলাচলের জন্য পাঁচটি ওভারপাস নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে জানা যায়, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পের ১২ হাজার কোটি টাকা দেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ছয় হাজার ৩৪ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। এডিবি চার ধাপে এই টাকা আমাদের দেবে। প্রথম ধাপে ৩০০ মিলিয়ন (দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা), দ্বিতীয় ধাপে ৪০০ মিলিয়ন (তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা), তৃতীয় ধাপে ৫০০ মিলিয়ন (চার হাজার কোটি টাকা) ও চতুর্থ ধাপে ৩০০ মিলিয়ন (দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা) দেবে। আর এসব টাকা যখন থেকে ছাড় শুরু করবে তখন থেকেই কাজ শুরু হবে।