৩ দিন পরও উদ্ধার হয়নি অপহৃত কলেজ ছাত্রী অপহরণকারীর ভাবী গ্রেপ্তার
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : সরাইলে সম্পূর্ণ ফিল্মি ষ্টাইলে অপহরণের ৩ দিন পরও উদ্ধার হয়নি অপহৃত কলেজ ছাত্রী। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে বখাটে সারোয়ারের বাবা চাচা সহ পরিবারের সদস্যরা। কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য গত মঙ্গলবার থেকেই চেষ্টা করছে সরাইল থানা পুলিশ। দুই যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। সেই সাথে গত বুধবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপহৃতাকে উদ্ধারের ঘোষনাও দিয়েছিলেন অফিসার ইনচার্জ রুপক কুমার সাহা। গত বৃহস্পতিবার রাতে কালিকচ্ছের চাকসার গ্রামে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী সারোয়ারের ভাবী সুমি (২২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্রীকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে অপহরণের পর মাইক্রোবাসে করে নিয়ে গেছে বখাটে সারোয়ার। ঘটনার পর সারোয়ারের বাবা চাচা সহ পরিবারের সকলেই অপহৃতাকে উদ্ধার করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছেন। তারা পুলিশ সহ স্থানীয় সালিসকারকদের কাছেও এ বিষয়ে অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল শুন্য। ঘটনার পরের দিন সকাল বেলা তারা বদলে যান। সময় ক্ষেপনের পাশাপাশি তারা একে একে সকলেই বন্ধ করে দেন তাদের মুঠোফোন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তারা অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
ঘটনার পরই পুলিশের হাতে আটক হয় রিপন (২২) ও জুয়েল (১৮) নামের দুই যুবক। দুইদিনের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অপহরণ বিষয়ে কোন তথা পায়নি পুলিশ। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার আটককৃত দুই যুবককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অপহৃতার মা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ৩ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে এই মেয়েটা সবার ছোট। খুবই আদরের। ভবঘুরে টু পাস ছেলের সাথে আমার মেয়ের কোন সম্পর্ক ছিল না। মেয়েটাকে মারধর করে মুখে কাপড় চেপে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে বখাটে সারোয়ার। মেয়ের বান্ধবীকে পর পর দুইবার লাথি মেরে খালে ফেলে দিয়েছে। ওই মেয়েটা ঘটনার পর থেকে ভয়ে কলেজে যাচ্ছে না। ৩ দিন হয়ে গেল। পুলিশ এখনো উদ্ধার করতে পারছে না। আমাদের মেয়েটা জীবিত আছে নাকি মৃত খোদাই জানেন। মেয়ের চিন্তায় আমাদের খাওয়া খাদ্য বন্ধ। তাদের টাকা আছে, লোক বলও আছে। তাই কিছু প্রভাশালী লোক দিয়ে তদবিরও করছে। একজন পুলিশ সদস্যের মেয়েকে অপহরণের পর যদি উদ্ধারে দীর্ঘ সূত্রিতা হয়। সাধারন মানুষের কি অবস্থা হবে? তাই আমার মেয়েকে দ্রুত উদ্ধারের নেয়ার জন্য গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) ময়নাল বলেন, অপহরণকারীর স্বজনরা ঘটনার পর থেকেই নানা টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে সারোয়ারের বড় ভাই আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সুমি আক্তার (২২) কে গত বুধবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপহরণকারীর অবস্থান এলাকাটি চিহ্নিত করেছি। অপহৃতাকে উদ্ধারের জন্য আপ্রান চেষ্টা করছি। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ রুপক কুমার সাহা বলেন, সারোয়ারের ভাবী সুমিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আ
র অপহৃতাকে উদ্ধারের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। অতিদ্রুত ভাল খবর পেতে পারেন। প্রসঙ্গতঃ গত মঙ্গলবার কলেজের ক্লাশ শেষ করে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ থেকে জনৈক বান্ধবী সহ বাড়িতে ফিরছিল ওই ছাত্রী। সরাইল-নাসিরনগর- লাখাই আঞ্চলিক সড়কের কালিকচ্ছের কদমতলী ওসমানের বাড়ির সামনে যাওয়া মাত্র দ্রুত গতিতে পেছন দিক থেকে একটি সাদা রঙ্গের মাইক্রোবাস এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে যায় দুই ছাত্রী। মাইক্রোবাসের গ্লাস টেনে সারোয়ারের নেতৃত্বে ৬-৭ জন যুবক নেমে ওই ছাত্রীর হাতে ধরে টানা খেঁচড়া করতে থাকে। কলেজ ছাত্রীর সাথে ওই যুবকদের ধস্তাধস্তি চলাকালে ছাত্রীর বান্ধবী বখাটেদের কবল থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। এ সময় বখাটে সারোয়ার ছাত্রীর বান্ধবীকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। পরে তারা ওই ছাত্রীকে জোর পূর্বক অপহরণের পর মাইক্রোতে উঠিয়ে দ্রুত নাসিরনগরের দিকে চলে যায়।