ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অন্যান্য সীমান্ত হাটে বাংলাদেশি পণ্য বিক্রি কম
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সীমান্তে নতুন করে আরো ৬১টি সীমান্ত হাট চালু হচ্ছে। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে মাত্র পাঁচটি সীমান্ত হাট রয়েছে। এসব হাট নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। হাটে সাধারণ ক্রেতা থাকলেও পণ্যসামগ্রী কেনার সুযোগ নেই। সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতা কোনো পণ্যসামগ্রী বেচাকেনা করতে পারে না। আবার হাট বসার দিন বারবার বদল হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতারা পড়ছে বিপাকে। আছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হয়রানি। আবার মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও বিক্রি করে দিচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে সীমান্ত হাট থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না।
আমাদের প্রতিনিধি জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা উপজেলা সীমান্ত হাটে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম হয় ২০১৫ সালের ১১ জুন। মাত্র এক বছর তিন মাসের ব্যবধানে এ হাট বসার বার (দিন) বদল করা হয়েছে চারবার। কখনো বৃহস্পতিবার, কখনো রবিবার, কখনো মঙ্গলবার হাট বসার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।
বলা চলে, দিন বদলের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে এ হাট। তবে বারবার দিন বদল করেও এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের দোকানগুলোতে বিক্রি একেবারে নেই বললেই চলে। তবে হাটে বাংলাদেশি ক্রেতাসমাগম বেশি হওয়ায় ভারতীয় দোকানগুলোতে বিক্রি অনেক বেশি।
হাটে বাংলাদেশের কাপড় ব্যবসায়ী অলিউল্লাহ সরকার অতুল বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের পণ্য বিক্রি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বৃহস্পতি ও মঙ্গলবার হাটের দিন হলে তো ভারতীয় লোকজন আসতেই চায় না। তবে রবিবার হাট বসলে ব্যবসার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। কেননা রবিবার ভারতে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি বিধায় সেখানকার লোক বেশি আসবে।’
অলিউল্লাহ অভিযোগ করে আরো বলেন, বিএসএফ বাংলাদেশি পণ্য নিতে তাদের দিককার লোকজনকে কৌশলে নিরুৎসাহিত করে। একজন ক্রেতা আট হাজার টাকা মূল্যের পণ্য কিনতে পারার নিয়ম থাকলেও বিএসএফ তা মানছে না। এর চেয়ে অনেক কম টাকার পণ্য নিয়ে যেতে চাইলেও বিএসএফ আটকে দিচ্ছে। এ ছাড়া ভারতীয় ৪০০-৫০০ লোকের বেশি এ হাটে ঢুকতে দেয় না বিএসএফ।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কসবা সীমান্ত হাটে উভয় পাশে ২৫টি করে মোট ৫০টি দোকান বসে। কসবা রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক পেছন দিকে উভয় দেশের ভূমির ওপর এ সীমান্ত হাট গড়ে উঠেছে। দুই দেশের মানুষ নিজ নিজ দেশের মুদ্রায় এখান থেকে পণ্য কিনতে পারে। কসমেটিকস, শাড়ি, বিস্কুট, চকোলেট, কলা, শুঁটকি ইত্যাদি পাওয়া যায় এ হাটে।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে হাটে যাওয়া-আসার জন্য দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার নাগরিক স্থায়ী প্রবেশ কার্ড করেছে। অন্যদিকে ভারতীয় এক হাজার ২০০ নাগরিক এ কার্ড করেছে। কার্ড ইস্যুতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি করে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছে। গত কয়েক দিন আগে এ হাট ঘুরে এসেছেন আখাউড়ার নয়াদিল গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জলিল। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সততা নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে এমন পণ্যও তারা আমার কাছে বিক্রি করেছে।’
আব্দুল খালেক ফারুক, কুড়িগ্রাম ও কুদ্দুস বিশ্বাস, রৌমারী জানান, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর বালিয়ামারী সীমান্ত হাটে সব পণ্যসামগ্রী কেনাবেচা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতা কোনো পণ্যসামগ্রী বেচাকেনা করতে পারে না। হাটে ভারত থেকে যেসব পণ্যসামগ্রী ওঠে, ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা সব কিনে নেয়। একইভাবে বাংলাদেশের যেসব বিক্রেতা রয়েছে তাদের পণ্যসামগ্রী ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভারতের বিক্রিতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। হাটে সাধারণ ক্রেতা থাকলেও পণ্যসামগ্রী কেনার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি সরেজমিনে সীমান্ত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ওই তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজীবপুরের বালিয়ামারী সীমান্তে জিঞ্জিরাম নদীঘেঁষা ভারতের কালাইরচর এলাকার নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থিত সীমান্তে হাটে ভারতীয় বিক্রেতা রবীন্দ্র কোচ বলেন, ‘হাটে কোন কোন পণ্য বিক্রি হবে তা আগেই বাংলাদেশিরা মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেয়। আমরা সে অনুপাতে পণ্য হাটে আনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, ‘হাটে বাংলাদেশের পক্ষে ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরাই ক্রেতা, আবার বিক্রেতাৎও।’
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বালিয়ামারী বিজিবি ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার বলেন, ‘হাটে কেনাবেচা সিন্ডিকেটের বিষয়টি সত্য নয়। একসঙ্গে অনেক পণ্যসামগ্রী দেখলেই আমরা আটকে দিই। তখন তারা অনেক ক্রেতার কার্ড একসঙ্গে এনে বলে এগুলো সবারই। পরিবহনের সুবিধার্থে একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে।’
হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘আমরাও সিন্ডিকেটের কথা শুনেছি। খুচরা বিক্রির ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন নজরদারি বাড়িয়েছে। আর সিন্ডিকেটের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’