আন্তর্জাতিক ডেস্ক :কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় বাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিকে আবারও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। বুধবার ভারতে নিয়োজিত পাকিস্তানি হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত বলেছেন, সত্যিকার অর্থে এমন কিছু হয়ে থাকলে পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা জবাব দিতো। ভারতীয় টেলিভিশন ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, পাঠানকোটের সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তীতে হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানিকে কথিত এনকাউন্টারে হত্যার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর আবারও জয়েশ ই মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানকে দায়ী করতে শুরু করে ভারত। পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর থেকে দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। ঘটনাকে ভারতের দিক থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করে তাদের সামরিক শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যে প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতের দাবিকৃত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এখন যতোটা না জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্ন,তার থেকেও বেশি করে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদা আর দম্ভের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে মিথ্যে প্রমাণের চেষ্টার ধারাবাহিকতায় বুধবার (১২ অক্টোবর) আব্দুল বাসিত বলেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রমাণ হিসেবে ভারত যে ভিডিওর কথা বলছে তা আসলে সাজানো। তিনি বলেন, ‘কোনও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়নি। ভারতীয় সেনারা সীমান্তের ওপার থেকেই কেবল গুলি ছুড়েছিল সেদিন। আর তাতে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানও এর সমুচিত জবাব দিয়েছে। যদি আদৌ কোনও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হতো তবে সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান এর জবাব দিতো। প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য আমাদের সময় নেওয়ার দরকার ছিল না। মনে হচ্ছে, ভারতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক শব্দটির অর্থ খুব হালকাভাবে নেওয়া হয়। আমি বলব, ওইদিন কোনও ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোয়নি….সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে কেবল।’
কাশ্মির ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বাসিত। তিনি বলেন, ‘উরির হামলার পর পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপিয়ে এবং দেশটিকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে ভারত আলোচনার সব দুয়ার বন্ধ করে রেখেছে।’
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দিয়ে এমন সামরিক অভিযানকে বোঝানো হয়, যে অভিযানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর বাইরে আশপাশের অবকাঠামো কিংবা জনসাধারণ হামলার শিকার হয় না বলে দাবি করা হয়। আর সীমান্ত সংঘর্ষ হলো আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা।