নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হবে। প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেয়া হবে।
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা জানান।
এর আগে ‘দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)-এর একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন ২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রতিবেদন আমার হাতে আছে। নির্ধারিত দিনে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, তবে তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তীতে ব্যাখ্যা করবে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেই তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে বলে সর্বশেষ জানিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের শেষ দিকে ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল’ গঠন করা হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আমরা চাই এটা এভাবেই চলুক।
উল্লেখ্য, হ্যাকররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি। দুই দিন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোপুরো অন্ধকারে ছিল। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘটনাটি জানে ৬ ফেব্রুয়ারি। ৭ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে অবহিত করা হয়েছে। পরের দিন অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক গভর্নর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। দীর্ঘ প্রায় এক মাস বিষয়টি গোপন রাখা হয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইজন কর্মকর্তাকে ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ দীর্ঘ ১৭ দিন দুই কর্মকর্তা ফিলিপাইনে অবস্থান করে অনেকটা শূণ্য হাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরেন। ঘটনাটি ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের জাতীয় দৈনিক ইনকোয়ারের প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়। দেশে এ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ২ মার্চ স্থানীয় পত্রিকায় তা ফলাও করে প্রচারিত হয়। ৭ মার্চ থেকে ঘটনাটি ব্যাপক আকারে জানাজানি হয়। এর পর দেশে ব্যাপক তোলপার পড়ে যায়। দেশের অর্থমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবহিত না করায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। স্থানীয় পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে।
পরে কর্তব্য অবহেলার কারণে সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় দুই ডেপুটি গর্ভনর নাজনীন সুলতানা ও এম এ কাশেমকে। চুরি যাওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারে মধ্যে দুই কোটি ডলার যায় শ্রীলংকায়, যা উদ্ধার করা হয়েছে বলে সে সময় জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার চার হিসাবের মাধ্যমে চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোয়। এরই মধ্যে চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে জব্দ করা হয়।
রিজার্ভের অর্থ চুরি তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি গত ৩০ মে অর্থমন্ত্রীর কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করে। এর পর গত ২১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানান, ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এর পর আরো দুই দফায় তিনি বলেন, খুব শিগগিরই প্রতিবেদনটি জনম্মুখে প্রকাশ করা হবে।