নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির টিকেটে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। হারিয়ে ছিলেন রাজনীতিতে তার গুরু বলে পরিচিত আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিনকে। পরেরবার মহিউদ্দিনেরই আরেক শিষ্যের কাছে হেরে গিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি। এই সাবেক রাজনীতিক-মেয়র মনজুর আলম আবার ক্ষমতাসীন দলে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন চলছে এখন।
মনজুর আলম বলছেন, তার চার পুরুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বিএনপির টিকেটে মেয়র ছিলেন বটে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে ছিলেন না কখনো। এখন গুরু (মহিউদ্দিন) চাইলেই তিনি ফিরে যাবেন নিজের ঘরে।
আর মহিউদ্দিন বলছেন, মনজুর আলম ফিরে এলে ‘না’ করবেন না তিনি।
এদিকে মনজুর আলমের আওয়ামী লীগে ‘যোগদানের’ গুঞ্জনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম বিএনপির সদ্য ঘোষিত সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, মনজুর আলম হলেন দুমুখো সাপ। তিনি বিএনপিতে থাকলেই কী আর আওয়ামী লীগে গেলেই কী।
মনজুর আলমকে নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় শুরু মূলত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ থেকে। মনজুরের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফাউন্ডেশনের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় এমপি দিদারুল আলম।
এরপরই গুঞ্জন ওঠে আওয়ামী লীগের আদর্শে অনুপ্রাণিত এই নেতা কি আবার আওয়ামী লীগে ফিরছেন? এরই মধ্যে কেউ কেউ ধরে নিয়েছেন শোক দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন মনজুর আলম।
তবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে কথা বলে তার যোগদানের নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও বেশ ইঙ্গিত মিলেছে।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “মনজুর আলম কখনোই বিএনপির আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন না। ২০০৯ সালে যখন বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন; তখন তিনি ছিলেন নির্বাচনে হেরে যাওয়া নগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। তার পরামর্শেই পাঁচ বছর করপোরেশন চালিয়েছেন মনজুর।”
আদর্শের বাইরের কাউকে প্রার্থী দেওয়াটা বিএনপির ভুল ছিল বলে মনে করেন ডা. শাহাদাত। তারই নাকি প্রমাণ নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিএনপির রাজনীতি থেকে মনজুরের সরে যাওয়ার ঘোষণা।
শাহাদত বলেন, “মনজুরকে মনোনয়ন না দিয়ে দুর্বল হলেও দলের কাউকে নার্সিং করলে আজ এমনটা হতো না। তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনেই তিনি বুঝতে পেরেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। ফলে তিনি পরাজিত হয়ে বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
২০০৯ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনজুর আলমকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার সম্মান দেয়া হয়েছিল জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি বলেন, “কিন্তু তিনি তার মর্যাদা রাখেননি। ফলে নতুন কমিটির কোথাও স্থান হয়নি মনজুরের।”
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “মনজুর আলম বিএনপির মেয়র থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী যেমন পালন করেছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীও পালন করেছেন। এ রকম দুমুখো সাপ নিয়ে কি রাজনীতি হয়?”
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাবেক মেয়র মনজুর আলম বলেন, “অভিমান করে কিছুদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির বাইরে গেলেও আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে ছিলাম না কখনো। আমাদের চার প্রজন্ম আওয়ামী লীগের রাজনীতির উত্তরাধিকার। মাঝে সাময়িক ভেদাভেদ থাকলেও আমাদের পরিবার এখন একই আদর্শে বিশ্বাসী এবং আওয়ামী লীগের পতাকাতলেই সংঘবদ্ধ।”
এক প্রশ্নের জবাবে মনজুর আলম বলেন, “১২ বছর আগে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছি আমি। এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আমি প্রতিবছর বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী পালন করি। এ বছরও তার ব্যত্যয় হয়নি। কিন্তু এবার এ নিয়ে মেতে উঠেছে মিডিয়া। মিডিয়া আমাকে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে এনে ছাড়ল।”
আওয়ামী লীগে ফিরতে চাইলে তার রাজনৈতিক গুরু এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী হাত ধরেই ফিরবেন বলে জানান মনজুর আলম। বলেন, “তিনি (মহিউদ্দিন) গ্রহণ করলেই তো আমার ফিরে আসার সুযোগ হবে। কিন্তু তিনি এখনো সে রকম কোনো সুযোগ আমাকে দেননি।”
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমি তো চাইব বাংলাদেশের সব মানুষ আওয়ামী লীগ করুক। মনজুর আলম যদি আওয়ামী লীগে ফিরতে চাই তাহলে ‘না’ করব কেন। কিন্তু তিনি এখনো আমাকে সে রকম কিছু বলেননি। ”
আওয়ামী লীগ সমর্থিত হিসেবে মনজুর আলম তিনবার চসিকের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন জানিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমার দুর্যোগকালীন সময়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমার বিশ্বস্ত। কিন্তু তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে দুঃখ পেয়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন আসতে চাইলে তিনি আসতেই পারেন। ”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনজুর আলমের বাবা আমৃত্যু আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবদুল হাকিম কন্ট্রাক্টর স্বাধীনতার আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। স্বাধীনতার পর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য। তারই বড় ভাইয়ের ছেলে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলম।
এমপি দিদারুল বলেন, “বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবার বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র মনজুর আলম সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম আমি।” ঢাকাটাইমস