আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কে ৩৮ হাজার কারাবন্দিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিচ্ছে সরকার।মুক্তি দেওয়া হচ্ছে শুধু তাদের, যাদেরকে ব্যর্থ অভ্যুত্থানে আগ পর্যন্ত জেলে রাখা হয়েছে। তবে কারাগারে বন্দিদের চাপ এখন অনেক বেশি।১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে প্রায় ২৩ হাজার লোককে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের রাখার জন্য কারাগার ফাঁকা করতে আগের কারাবন্দিদের শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, সরকার তা পরিষ্কার করেনি।
তুরস্কের বিচারমন্ত্রী জানিয়েছেন, যারা এরই মধ্যে তাদের সাজার অর্ধেকটা ভোগ করেছেন, কেবল তাদেরই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু যাদের সাজা ভোগের মেয়াদ এক-তৃতীয়াংশ পার হয়নি, তারা ছাড়া পাবে না। তিনি আরো জানিয়েছেন, হত্যা ও যৌন নির্যাতন মামলায় সাজাপ্রাপ্তরা শর্তের আওতায় পড়বে না। পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করতে হবে তাদের।
অভ্যুত্থান চেষ্টার পর সরকারপরিচালিত শুদ্ধি অভিযানে যে পরিমাণ মানুষ আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে কারাগার ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কারাগারের পরিসর ও সেবা দুই-ই বাড়ানোর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০২ সালে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দল একে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর কারাবন্দির সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে গেছে। ২০০২ সালে তুরস্কের কারাগারগুলোতে ৬০ হাজারের মতো বন্দি ছিল। ২০০৮ সালে তা লাখ ছাড়িয়ে যায় এবং ২০১৫ সালে ১ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়ায়।
তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, মার্চ মাস পর্যন্ত তুরস্কের ৩৬৪টি কারাগারে ১ লাখ ৮৭ হাজার বন্দি রয়েছে। ওই সময়ে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৪ হাজার বেশি বন্দি ছিল। অভ্যুত্থান চেষ্টার পর গণগ্রেপ্তারে বন্দির চাপ বেড়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার বেশি বন্দি রয়েছে তুরস্কে।
বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদাগ জানিয়েছেন, এ বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের মুক্তি দেওয়া হবে না। তা ছাড়া অভ্যুত্থান চেষ্টাকালীন যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শর্ত থেকে বাদ পড়বে অর্থাৎ তারা এ শর্তে মুক্তি পাবে না।
বেকির বোজদাগ বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে কারাবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি সাধারণ ক্ষমা নয়।
১৫ জুলাই তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গণহারে ধরপাড়ক চালায় পুলিশ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার ইচ্ছামতো সরকারের বিভিন্ন স্তর ঢেলে সাজাচ্ছেন।
এ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রায় ৮২ হাজার লোককে গ্রেপ্তার, আটক, নয়তো স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার-আটক এখনো চলছে এবং চলবে।
সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার জন্য তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান দায়ী করেছেন স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ফেতুল্লাহ গুলেনকে। গুলেন এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু গুলেনকে দেশে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্ক হুঁশিয়ারিও দিয়েছে, গুলেনের জন্য যেন তাদের সম্পর্ক নষ্ট না হয়।