১৫ আগস্টের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা প্রথম জানতে পারেন তাঁদের বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা বেঁচে নেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ও ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ঘটনার ১৫ দিন আগে শেখ হাসিনার স্বামীর কর্মস্থল জার্মানি চলে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৪ আগস্ট আমরা জার্মানি থেকে দিল্লি পৌঁছালাম। ইন্দিরা গান্ধী বারবার খবর পাঠাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হলো ৪ সেপ্টেম্বর। তাঁর মুখ থেকে শুনলাম কেউ বেঁচে নেই।’
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানি যাই। ড. ওয়াজেদ ছাত্র ছিলেন। কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন আমি সেখানে যাই। একপর্যায়ে আব্বা নিজেই বলেছিলেন, আচ্ছা যাও। অনেকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দেশ ছাড়ি। রেহানাকেও সঙ্গে নিয়ে যাই। আমার মা যাওয়ার সময় আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি না, যাওয়ার দিন কেন আমার মা এভাবে কেঁদেছিলেন। মাকে আমি কখনো এভাবে কাঁদতে দেখিনি। আমার মা খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন, তিনি কখনো তাঁর অভাব-অভিযোগের কথা বলতেন না। যাওয়ার সময় তাঁকে এভাবে আকুল হয়ে কাঁদতে দেখে বললাম, মা তুমি এভাবে কাঁদলে আমি যাব না। আমি জানি না, তিনি কিছু বুঝতে পেরেছিলেন কি না।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৩ আগস্ট মা ও বাবার সঙ্গে আমার নেদারল্যান্ডস থেকে শেষ কথা হয়। এ সময় নেদারল্যান্ডস কীভাবে নদী থেকে জমি উদ্ধার করছে (ল্যান্ড রিক্লেমেশন প্রজেক্ট) এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়।’
মায়ের সঙ্গে সেদিন টেলিফোনে শেষ কথার সময়ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব খুব কেঁদেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিনও তিনি খুব কেঁদেছিলেন। বলেছিলেন, তুই আয়, তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। আর সে কথা হয়নি।’
অনুষ্ঠানে ১৫ আগস্ট নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন। এ ছাড়া সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরপ্রথম আলো সহযোগী সম্পাদক ও কবি আনিসুল হকের লেখা ‘৩২ নম্বর মেঘের ওপারে’ শীর্ষক কবিতাটি আবৃত্তি করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শোক দিবস উপলক্ষে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।