নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্টদূত ডেভরিম ওসতুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তুরস্ক হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে তুরষ্ক মূল্যবান হিসাবে গণ্য করে।
তুরস্কে সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুর্থানের ওপর আলোকপাত করতে মঙ্গলবার হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সাধারণ জনগণের সমর্থনে তুরস্ক সামরিক বাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। গত ১৫ জুলাইয়ের এ অভ্যুত্থানচেষ্টার জন্য ফেতুল্লাহ সন্ত্রাসী সংস্থাকে (এফইটিও) দায়ী করা হয়। ফেতুল্লাহ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রবল আপত্তির মুখেও জামায়াতে ইসলামীর মরহুম আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার পর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে রাষ্ট্রদূতকে আঙ্কারা ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক কী রকম – জানতে চাওয়া হলে ওসতুর্ক বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে জোরালো সম্পর্ক বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক অনেক ক্ষেত্রে আমরা পরষ্পরকে সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তুরষ্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্তা দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত হিসাবে দুই দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়া আমার দায়িত্ব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তুরস্ক হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের মতামত ও পরামর্শ বাংলাদেশী ভাইদের কাছে আমরা তুলে ধরি। এটাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মনে করলে ভুল হবে। আমরা মনে করি সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে মৃত্যুদন্ড সামাজিক সংহতির জন্য সহায়ক নয়। তুরষ্কের অবস্থান মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে তুরস্ক গণ্য করে কিনা – প্রশ্ন করা হলে ওসতুর্ক বলেন, অব্যশই তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা যা বলেছি তা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ। কেননা আমরা সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে মৃতুদন্ডের জন্য মূল্য দিয়েছি। পরে তুরস্ক থেকে এই দন্ড বিলুপ্ত করা হয়েছে।
তুরস্ক মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান তুলে ধরলেও প্রেসিডেন্ট এরদোগান ব্যর্থ অভ্যূর্থানের পর তা আবারো চালু করার কথা বলেছেন – এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা পার্লামেন্টে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত হবে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতি তুরস্কের সহানুভূতিশীল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো বৈষম্য নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়াত একটি আইনগত বৈধ দল ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও বৈষম্য থাকবে না।
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ থেকে তুরস্কের তিন কূটনীতিকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার সন্দেহে তিন কূটনীতিককে ১০ আগস্টের মধ্যে আঙ্কায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের অবগত করা ছাড়াই তারা ভিন্ন দেশে চলে গেছে।
ওসতুর্ক বলেন, ব্যর্থ অভ্যুথানের পর তুরস্কে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তুরস্কের সব কটি রাজনৈতিক দল অভ্যুর্থানের বিরোধিতা করেছে। লক্ষাধিক মানুষ অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে। তুরস্কে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
এফইটিওকে একটি ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশসহ সব রাষ্ট্রকে তাদের তৎপরতা সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।