নিউজ ডেস্ক : জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় আটক মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু আল-মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব’র তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। মুসাকে জেরা করতে সোমবার কলকাতা পৌঁছায় র্যাবের দলটি। মঙ্গলবার সকালেই সল্টলেকে পৌঁছে যায় র্যাবের গোয়েন্দারা। এনআইএ-এর হেফাজতে থাকাকালীন জেরায় কী কী তথ্য পাওয়া গেছে তা জেনে নেয় র্যাব। গত জুলাইয়ে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জেএমবি যোগ খতিয়ে দেখতে এবং ওই হামলার তদন্তে অগ্রগতি আনতেই মুসাকে দফায় দফায় জেরা করে গোয়েন্দা দলটি।
জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষে মঙ্গলবারই কলকাতার নগর দায়রা আদালতে তোলা হয় মুসাকে। তাকে নতুন করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানায় এনআইএ। পরে এনআইএ’র আর্জি মেনে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরপর আদালত থেকে মুসাকে কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের এনআইএ কার্যালয়ে। সেখানেই মুসাকে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। সঙ্গে ছিলেন এনআইএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
যদিও এদিন সকালে আদালতে তোলা হলে র্যাবের জেরার মুখোমুখি হতে অস্বীকার করে মুসা। এজলাসের মধ্যেই কেন তাকে বাংলাদেশের পুলিশ জেরা করতে চায়? সে বিষয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে মুসা। এক সময় এজলাসের মধ্যে কেঁদে ফেলে মুসা। শুধু তাই নয়, এজলাসের মধ্যেই ‘জয়হিন্দ’ বলে একাধিকবার চিৎকার করে ওঠে। তবে ঠিক কী কারণে ভরা এজলাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে মুসা জয়হিন্দ বলতে শুরু করল, সে বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছে পুলিশ। কৌশল পাল্টে মুসা এজলাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে জয়হিন্দ বলতে শুরু করলো কি না সে বিষয়েও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। কাউকে আড়াল করতেই কি মুসা বাংলাদেশ গোয়েন্দাদের জেরার মুখোমুখি হতে চাইছে না? সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত ১ জুলাই ঢাকায় জঙ্গি হামলার পর ৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান রেল স্টেশনে বিশ্বভারতী ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার থেকে মুসা (২৫)-কে যৌথভাবে আটক করে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ ও পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি। মুসাকে জেরা করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও জামাত উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানতে পারে এনআইএ গোয়েন্দারা।
মঙ্গলবার এনআইএ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সন্ত্রাস দমন, জাল রুপি পাচার রোধে এনআইএ এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো একযোগে কাজ করছে। তাছাড়া ঢাকায় জঙ্গি হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সবমিলিয়ে মুসাকে জেরা করতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি কলকাতায় এসেছেন।
জেএমবি’র বাংলাদেশের নেতা মহম্মদ সুলেইমানের সঙ্গে মুসার ঘনিষ্ঠতার দিকটিও খতিয়ে দেখতে চায় বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। এনআইএ’র অন্য একটি সূত্র জানায়, ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলায় এই সুলেইমানের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া সুলেইমানের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে এই মুসার। গত বছরের মার্চ মাসে নিজের ছোট ভাইয়ের বিয়ের সময় বীরভূমের বাড়িতে আসে মুসা। সেখানেই ‘জিহাদি জন’ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত হয়। পরে জানা যায় এই জিহাদি জনই হল সুলেইমান।
বর্ধমান থেকে মুসাকে আটকের পরই এনআইএ গোয়েন্দারা জানতে পারে ভারতে আইএস’র সাবেক প্রধান শফি আরমারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মুসার। চার মাস আগে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার একটি গোপন জায়গায় তারা মিলিত হয়েছিল বলেও জানতে পারে গোয়েন্দারা। যৌথ জেরাতেই আইএস ও জেএমবি এই দুই জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের যোগসাজেশের কথা স্বীকার করে মুসা। পাশাপাশি মুসার ওপর পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্যগুলিতেও এই দুই জঙ্গি সংগঠনের জাল বিস্তারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলেও স্বীকার করে মুসা। মুসার মোবাইল কল লিস্ট পরীক্ষা করে গোয়েন্দারা জানতে পারে সিরিয়া, ইরাক ও বাংলাদেশে একাধিক জঙ্গি নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল সে। বিডি-প্রতিদিন