বৃহস্পতিবার, ২১শে জুন, ২০১৮ ইং ৭ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

হানিফ ভুঁইফোড়!

4bk1d7fc6423562u4o_620C350নিউজ ডেস্ক : পহেলা বৈশাখকে অপসংস্কৃতি উল্লেখ করে এই দিবসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ছে আওয়ামী ওলামা লীগ। যদিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুব আলম হানিফ বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওলামা লীগ নামের এই সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি আওয়ামী লীগের কোনও সংগঠন নয়। অন্যদিকে আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলছেন, ‘যারা ভুঁইফোড় নেতা তারাই আমাদের সমালোচনা করছেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে হানিফেরা কোথায় ছিলেন।’

জানা গেছে, পহেলা বৈশাখকে অপসংস্কৃতি উল্লেখ করে এই দিবসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক সহযোগিতা বন্ধের দাবি জানিয়ে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী ওলামা লীগ। এছাড়াও সংগঠনটি বর্তমান শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন উল্লেখ করে শিক্ষা আইন বাতিলসহ ১০ দফা দাবি জানায়। মানববন্ধনে আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, উলুধ্বনি দেওয়া, শাঁখ বাজানো, মঙ্গল কলস সাজানো, ঢাক-ঢোলের ব্যবহার, মুখোশ পরে শোভাযাত্রা, মুসলিম মহিলাদের সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া বিধর্মীদের কাজ। মুসলমানদের ইসলামহীন করার লক্ষ্যে অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। তাই এ অপতৎপরতা বন্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে নববর্ষ উদযাপন বন্ধ করতে হবে।’

আওয়ামী ওলামা লীগের এই মানববন্ধনে যোগ দেয় আরও ১২টি সংগঠন। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, বঙ্গবন্ধু ওলামা ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে এমন মন্তব্য করে সমালেচনার মুখে পড়ে ওলামা লীগ। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে এমন সংগঠন আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল ফেসবুকে স্টাটাসে লিখেন, ‘ওলামা লীগ! এটা কী খায় না মাথায় দেয়? পহেলা বৈশাখ এর বিরুদ্ধে যারা বলে তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, দায়িত্ব নিয়ে বলছি। শেখ হাসিনা প্রথম সরকার প্রধান যিনি বৈশাখী ভাতা চালু করেছেন| যে সব অতি বিপ্লবী বঙ্গবন্ধুর দল মুসলিম লীগ হয়ে গেছে বলে নাকি কান্না জুড়ে দিয়েছেন তারা দয়া করে থামুন| এদেশ, বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানুষের জন্য শেখ হাসিনার দরদ আমার আপনার চেয়ে কম নয়।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের কোনও অঙ্গ সংগঠন বা সহযোগী সংগঠন নয়। এটা বাটপারদের সংগঠন। এরকম যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সংগঠন করে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বলেছি। ওলামা লীগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনকে বলা আছে।

ওলামা লীগ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুব আলম হানিফের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেন, ক্ষমতায় থাকলে মানুষ কত কিছু বলবে। যারা ভুঁইফোড় নেতা তারাই আমাদের সমালোচনা করছেন। যখন আওয়ামী লীগের দুর্দিন সেসময় হানিফ সাহেব কোথায় ছিলেন? আমরা রাজপথে ছিলাম। আন্দোলন করেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি। তখন আব্দুর রাজ্জাক, ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক নেতা আমাদের মূল্যায়ন করেছেন। শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে নিয়ে খাইয়েছেন। দল এখন ক্ষমতায় বলে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কত লোক কোটি টাকা কামাচ্ছে।’

মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ বলেন, স্বর্ণ দিয়ে বাঁধালেও ওলামা লীগের মূল্যায়ন শেষ হবে না। আমরা মুসলমান হিসেবে কথা বলেছি। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, উলুধ্বনি দেওয়া, শাঁখ বাজানো, মঙ্গল কলস সাজানো, ঢাক-ঢোলের ব্যবহার, মুখোশ পরে শোভাযাত্রা, মুসলিম মহিলাদের সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া বিধর্মীদের কাজ এসব বলেছি। এগুলো করলে আওয়ামী লীগের ভোট কমবে, এজন্য বলেছি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

Print Friendly, PDF & Email