মাঠের বাইরে মাতব্বরি, মাঠে নাস্তানাবুদ ভারত
---
ক্ষমতার দাপটে মাঠের বাইরে মাতব্বরি করা যায়। ক্রিকেট বিশ্বের বাকি দেশগুলোর ওপর ছড়ি ঘোরানো যায়। আফসোস, সেই একই ক্ষমতা ব্যবহার করে মাঠে ম্যাচ জেতা যায় না। গেলে ভারতের আজ এই দুর্দশা হতো না। ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ হারার লজ্জায় পড়তে হতো না। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটা ‘টাই’ হয়েছে বলে এটিকে ঠিক হোয়াইটওয়াশ বলা যাচ্ছে না। তবে ভারত যে ‘পৌনে-ধবলধোলাই’ হলো, সেও কী কম লজ্জার! আজ ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮৭ রানে হারল ধোনির দল।
নিউজিল্যান্ডে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় পরাজয়। সর্বশেষ সাত ওয়ানডেতে ভারত জয়শূন্য। সর্বশেষ নয় ওয়ানডেতে জিতেছে মাত্র একটিতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের সর্বশেষ তিনটি সিরিজের ফলাফল এমন: ০-২, ০-১ এবং ০-৪! ভারতকে এখন আবার ক্রিকেটের পাঠশালায় ফিরে গিয়ে নতুন করে এ-বি-সি-ডি শেখার পরামর্শ দেওয়াই যায়!
রস টেলরের সেঞ্চুরি আর কেন উইলিয়ামসনের ৮৮ রানের দুটো ইনিংসের সুবাদে প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে তুলেছিল ৩০৩ রান। মাত্র ৭৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা ভারত শেষ পর্যন্ত ২১৬ রানে অলআউট হলো। লজ্জাজনক পরাজয়, মাত্র কদিন আগে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ভারত কদিন আগে বাংলাদেশের কাছে ধবলধোলাই হওয়া ৭ নম্বর দলটির কাছে সিরিজে একেবারে নাস্তানাবুদ হলো।
নিকট অতীতে কোনো সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে ভারত সর্বশেষ হেরেছে ২০০৬ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সেবার চার ম্যাচে ধবলধোলাই হয়েছিল ভারত। ১৯৮৩ এবং ১৯৮৯ সালে ভারতকে ৫-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমবার ভারতে এসে, দ্বিতীয়বার নিজেদের দেশে। এর মধ্যে ১৯৮৩ সালের ভারত সফরের সেই ধবলধোলাইকে মনে করা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়ার নির্মম প্রতিশোধ!
এসবের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারতের এই পরাজয়ের লজ্জার তুলনা হয় না। সেই লজ্জা থেকে বাঁচাতে আজও প্রায় নিঃসঙ্গ লড়াই করেছেন ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি। তাঁর ৮২ রান বাদে ভারতের ইনিংসে আর কোনো ফিফটিই নেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ করেছেন ধোনি।
৪১ রানে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনারকে তুলে নিয়ে ভারতের বোলাররা বেশ ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিরিজে উইলিয়ামসের টানা পঞ্চম ফিফটির ইনিংস, টেলরের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, তৃতীয় উইকেটে এই দুজনের ২৫.১ ওভার স্থায়ী ৬.০৩ করে ওভারপিছু রান তোলা ১৫২ রানের জুটিটা ভারতকে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে দেয়। উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরিটা পেলেন না। তবে ইয়াসির হামিদের গড়া পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রতিটিতে কমপক্ষে ফিফটি করার বিশ্ব রেকর্ডটি ছুঁলেন।
এই দুজনের গড়ে দেওয়া ভিত্তির ওপর রানের চাকা শেষ দিকে বন বন করে ঘুরিয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, জেমস নিশমরা। টেলর নিজেও ৪৮ ওভার পর্যন্ত ছিলেন উইকেটে। শেষ ১০ ওভারে ৯১ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের শেষ আর ভারতের শুরুটা ছিল একেবারেই উল্টোপথের যাত্রা যেন। বিশ্বের ‘সেরা’ ব্যাটিং লাইনআপ এদিন ৩০৪ রানের লক্ষ্যের কথা ভেবেই যেন জবুথবু হয়ে যায়। প্রথম ১০ ওভারে আইপিএলের মারকাটারি ক্রিকেটের জনক ভারত আদ্দিকালের টেস্ট ঘরানার ব্যাটিং করেছে। তুলেছে মাত্র ২০ রান। রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ানরা সাপের ফণা তুলে শরীর লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা শর্ট বলের ভয়েই যেন কাতর!
ইনিংসের প্রায় মাঝপথে, ২৪ ওভার শেষে স্কোরটা দেখে মনে হচ্ছিল, ভারত নয়, যেন ব্যাটিং করছে পাপুয়া নিউগিনি। ততক্ষণে ৪ উইকেটে মাত্র ৭৮ তুলেছে ভারত। রাইডু আর ধোনিকে নিয়ে কোহলি ঘুরে দাঁড়ানোর একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন বটে। এই দুই জুটিতে ১১৫ রানও যোগ হয়েছে। কিন্তু এরপর ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটিটা ৩৪ রানের, সেই জুটিটাও হয়েছে নবম উইকেটে—সামি আর ভুবনেশ্বর কুমারের মধ্যে। এটাও তো ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানদের জন্য নিদারুণ লজ্জার।
অভিষেকেই মাত্র ৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন ম্যাট হেনরি। ম্যাচ সেরা অবশ্য টেলরই।
আগামী বছর এই নিউজিল্যান্ডেই বিশ্বকাপ খেলতে আসবে ভারত। ২০১১ সালে জেতা বিশ্বকাপ শিরোপাটা ধরে রাখার একমাত্র উপায় এখন সম্ভবত মাঠের বাইরে মাতব্বরি করেই ট্রফির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নেওয়া!