মঙ্গলবার, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ২৭শে ভাদ্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া বাস্তবায়ন হবে কি?

ডেস্ক রিপোর্ট: বাসে উঠার পরেই বাসের হেলপারের কমন ডায়ালগ, ‘মামা ভাড়াটা দিয়েন তো। আর যাত্রী যদি শিক্ষার্থী হন তাহলে বারবার বলেন। যাইহোক ভাড়া দিলো রিয়াদ। আর ভাড়া দেয়ামাত্র শুরু হয়ে যায় বাকবিতণ্ডা। কারণ সেটা স্টুডেন্ট ভাড়া।
কত দিলেন মামা? পনেরো টাকা কেন, কই যাবেন?
-রামপুরা।
আরে পনেরো টাকা দেন কেন? মিরপুর-১ থেকে রামপুরার ভাড়া ৩০ টাকা।
-রিয়াদ বলে উঠে আমি তো ছাত্র। আর দিতে পারব না।
ছাত্র বললে হবে না, মামা হাফ ভাড়া নাই।
-সেটা সরকার জানে আমাকে বলে লাভ নেই।
টাকা দিবেন আপনি, তাতে সরকার আসে কেন।
-সরকার হাফ ভাড়া সিসটেম করে রাখছে অনেক আগে থেকে সেখানে ছাত্র হয়ে পুরো ভাড়া কিভাবে দেই?
মামা কোম্পানির সিটিং বাস তাই পুরো ভাড়া দিতে হবে।
-সিটিং সার্ভিস লিখে বাস নামায়ে দিলেই সিটিং?
হ মামা।
-তবে যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের কী সার্ভিস বলে?
মামা পুরা ভাড়া দেন না হয় ওয়েবিল ওয়ালাকে বইলেন স্টুডেন্ট, যদি তারা মানে তবে আমি কিছু বলবো না।
-পুরো ভাড়া দিব সেদিন যেদিন সিটিং এর নামে চিটিং বন্ধ হবে।
সে হইবো না, মন চাইলে উঠেন না হয় অন্য কোম্পানির বাসে যান।

এমন ঝগড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর এখনও হচ্ছে প্রতিদিন। রিয়াদের মতো অনেক স্টুডেন্টের সাথে বাস হেলপারের রোজকার তর্কবিতর্ক। আর যদি সেটা হয় হাফ ভাড়া তাহলে তো কথাই নাই। বাসের হেলপারের সাথে শুরু হয়ে যায় ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা।

রিয়াদ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তিনি বলেন, নিত্যদিনের কাহিনী, ভার্সিটি যেতে এসব হবেই কারণ কোম্পানি নাম দিয়ে সরকারি রাস্তাতে কিছু বাস নামিয়ে দিছে যার মধ্যে লিখা থাকে ‘হাফ-পাস নাই’। চিপা-চাপা যেখানে একটা মানুষ পাবে সেখান থেকেই তুলে নেবে। বাসে লোক তোলার জায়গা না থাকলেও দরজাতেও জায়গা করে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছাদে উপায় নেই নেয়ার, না হয় সেখানেও নিতো।

তিনি বলেন, ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া সরকার অনেক আগে করে রেখেছে কিন্তু এই বাসগুলো সরকারের কথা মতো কাজ করছে না। নিজেদেরই সরকার ভাবে আর রাস্তাটাও। হাফ ভাড়া নেই কিন্তু সিটিং সার্ভিসের কথা বলে দাঁড়িয়ে আসতে হয় তাও আবার পুরো ভাড়া দিয়ে।

সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল। তখণ তারা নয় দফা দাবি তোলে। এর মধ্যে একটি দাবি ছিলও ‘প্রতিটি বাসে স্টুডেন্টদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’ আন্দোলন স্থগিত হলেও এখনও গণপরিবহনগুলোতে হাফ ভাড়া নেয়া হয় না।

সেই আন্দোলনের মধ্যে গত ৬ আগস্ট সরকার সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। সেদিনের মন্ত্রিসভায় নতুন সড়ক আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়।

এরপর গত ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সচিবালয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের শেষ সংসদ অধিবেশনে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস হবে বলে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা এই অধিবেশনে আইনটি পাস করার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা এই সরকারের শেষ অধিবেশন। আশা করছি, এই অধিবেশনেই আইনটি পাস হবে।

মন্ত্রী সেদিন আরও বলেছিলেন, যেসব শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করেছিল, আমি তাদের স্যালুট করি। তারা আন্দোলনটা করেছিল বলে আজ এই আইনটা যেভাবেই হোক আলোর মুখ দেখছে।
এই হাফ ভাড়ার প্রচলন কিভাবে শুরু হয়েছিল তা জানতে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের(এআরআই) সাবেক পরিচালক ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সম্ভবত ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি চারটি বাস দিয়ে সরকারিভাবে গণপরিবহন সেবা দেয়া শুরু করে। তখন থেকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবা। পরবর্তীতে যখন সরকারি বাসের সাথে সাথে বেসরকারি বাস গণপরিবহনের সেবা দেয়া শুরু করে। তখন সরকারি বাসের নিয়মে বেসরকারি বাসেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এ বিষয়ে যেহেতু কোনও লিখিত নিয়ম নাই। এটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়ায়, যেটা পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন চলে। কিন্তু সরকার যেহেতু বেসরকারি বাস কোম্পানির সাথে কোনও চুক্তি করে নাই সেহেতু এই হাফ ভাড়া নিতে তারা বাধ্য নয়। তবে সাধারণ যাত্রীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি গণপরিবহন সঙ্গে সরকারের যদি চুক্তি থাকতো, বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়াসহ ছাত্রদের হাফ ভাড়া বিষয়ে চুক্তি থাকত তাহলে ভালো হতো এবং এতো তর্কবিতর্ক হতো না। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বেসরকারি গণপরিবহনের সাথে সরকার চুক্তি করে থাকে। সরকারের চুক্তি এবং লিখিত কোনও আইন না থাকার কারণে হাফ ভাড়ার এই প্রথাটা ধীরে ধীরে উঠে যেতে থাকে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) মুখপাত্র পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, হাফ ভাড়া নিয়ে কোনও লিখিত আইন নাই। এ নিয়ে মন্ত্রিসভায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সড়ক পরিবহন আইনেও হাফ ভাড়ার কথা নেই। তবে সড়ক পরিবহন আইনটি সংসদে পাস হবার পর আইনটির বিধিতে হাফ ভাড়ার বিষয়টি রাখার কথা রয়েছে। সূত্র: আরটিভি অনলাইন

এ জাতীয় আরও খবর

কিউ ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজ কিনতে বিমানের চুক্তি

নাইন ইলেভেনের ১৭তম বার্ষিকী আজ

দলীয় কোন্দল: আ.লীগ জবাব চেয়েছে ১৪ এমপি-নেতার কাছে

পলক ফেলতেই গায়েব ভবনগুলো

একি উপহার সন্তানের

ডিএনসিসির কোনো নির্দেশনা মানছেন না ট্রাক চালকরা

বাঞ্ছারামপুর আসনে কে হবেন নৌকার মাঝি ?

সরকারের বড় বড় প্রকল্পের জন্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ