নৌকার পক্ষে ঠেলাগাড়ি, ধানের শীষে কেউ নেই!
ডেস্ক রিপোর্ট : শ্বশুর ফিরোজ আহমেদ ও জামাতা জিয়াউদ্দিন সিকদার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত। দুজনই বর্তমান কাউন্সিলর। গত নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনায়াসে বিজয়ী হয়েছিলেন দুজনই। এবারও কাউন্সিলর পদে পাশাপাশি ওয়ার্ডে লড়ছেন তাঁরা ভিন্ন প্রতীক নিয়ে। তবে এবার এই দুই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ যাঁদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে, এলাকায় তাঁদের খুবই শক্ত অবস্থান। তাই শ্বশুর-জামাই আটঘাট বেঁধে নেমেছেন নিজেদের জয় ধরে রাখতে। ফলে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন না তাঁরা।
মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ফিরোজ আহমেদ ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ফিরোজের প্রতীক টিফিন ক্যারিয়ার আর জিয়াউদ্দিনের লাটিম। মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে নির্বাচনী কোনো কর্মসূচিতেই অংশ নিচ্ছেন না তাঁরা। নিজের প্রচারে ব্যস্ত থাকার কথা স্বীকার করে জিয়াউদ্দিন সিকদার অবশ্য বলছেন, নিজের ওয়ার্ডে ধানের শীষের পক্ষে তিনি ভোট চাচ্ছেন।
তবে ওই দুটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অবস্থা উল্টো। শ্বশুর-জামাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা লড়ছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে। সিটির যে ২৭ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হচ্ছে এর ২৫টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরা ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বরিশাল সিটির ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থক তিন প্রার্থী এরই মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বাকি ২৭টি ওয়ার্ডের ২৫টিতে দলীয় প্রার্থীরা ঠেলাগাড়ি প্রতীক পেলেও দুটিতে একাধিক প্রার্থী থাকায় সেখানে ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলছেন, দল নয়, ব্যক্তি ইমেজের কারণে জনগণ তাঁদের ভোট দিচ্ছে। তাই এবারও ব্যক্তিগতভাবেই ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন তাঁরা। বিষয়টি দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার অবগত আছেন। তাই কাউন্সিলর পদে বিএনপি সরসরি দলীয় সমর্থন দেয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা বলছেন, নিজেদের প্রতীকের পাশাপাশি নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতেও তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা ভোটারদের নৌকা ও ঠেলাগাড়ি প্রতীকে ভোট দিতে অনুরোধ করছেন।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আকবর ব্যস্ত তাঁর নির্বাচনী প্রচার নিয়ে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আইন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন। তিনি ওই ওয়ার্ডে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। ফলে নিজের বিজয়ের জন্য প্রাণপণ খাটছেন সৈয়দ আকবর। দলীয় মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সুযোগ হচ্ছে না তাঁর। তবে আকবরের দাবি, তিনি নিজের মাঠ গুছিয়ে মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষেও কাজ করবেন।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘সাধারণ জনগণ আমাকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। আমি তাদের হয়ে কাজ করেছি। আবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছি তাদেরই জন্য। আমি বিএনপির কোনো পদে নেই। আর কাউন্সিলর নির্বাচনে দলীয় কোনো ভূমিকাও নেই। তাই নিজের নির্বাচনী প্রচার নিয়েই ব্যস্ত। মেয়র দলীয় প্রার্থী, কর্মীরা তাঁর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। আমার পক্ষে সব দলের কর্মীরা কাজ করছেন।’
মহানগর বিএনপির সহসভাপতি কে এম শহীদুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ শিকদার বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় পরিচয়ে নয়, ব্যক্তি ইমেজের কারণে তাঁরা বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বিএনপি যেমন তাদের ভোট দিচ্ছে, তেমনি অন্য দলগুলোর সমর্থকরাও দিচ্ছে। নিজেদের প্রচারে তারা ব্যস্ত, মেয়রের পক্ষে কাজ করার সময় হয়ে ওঠে না।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য সব কাউন্সিলর পদপ্রার্থীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই তাঁরা কাউন্সিলরের পাশাপাশি মেয়র পদে প্রচার চালাচ্ছেন। – কালের কণ্ঠ