‘পাকিস্তানিরাও এভাবে মানুষ খুন করেনি আ.লীগ যেভাবে করছে’
ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একনায়ক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ৯ বছর লড়াই করেছি। কিন্তু এত খারাপ সময় আমরা কখনও পার করিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ৯ মাস যুদ্ধের সময় ভয়াবহ অবস্থা ছিল। কিন্তু তার আগে পাকিস্তানিরা এভাবে উলঙ্গভাবে মানুষ হত্যা করেনি, আজ আওয়ামী লীগ যেভাবে করছে।’
শুক্রবার (১ জুন) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুণ নির্মিত ‘রণধ্বনি’ নামের গানের সিডি উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। সাবেক সাংসদ মাসুদ অরুণের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু বক্তব্য দেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের মাইনুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণের সাইদুর রহমান মিন্টু, খতিবুর রহমান, খোকন ও মোজাম্মেলন হক মুক্তো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে নিয়ে মেহেরপুর বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণের লেখা গানের সিডি ‘রণধ্বনি’র মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে নয়া পল্টনে বিএনপির মহানগর কার্যালয়ের মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, “পাকিস্তান সময়ে যুদ্ধে ৯ মাস, তার আগে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠিও এই একেবারে উলঙ্গভাবে মানুষ হত্যা করেনি, মানুষের ওপর নির্যাতন করেনি, মানুষের ওপরে নির্মমতা চালায়নি। আজকে সব কিছু ছাড়িয়ে গেছে এই আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে, যারা নির্বাচিত নয়, যাদের প্রতি জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নাই।”
গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজ তারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য। আজ গণতন্ত্রের মোড়ক নিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। কথায় কথায় সরকারি দল সংবিধানের দোহাই দেয়। বাস্তবতা কী? আজ গ্রামে যান, সাধারণ মানুষের কাছে যান, তারা কী ভাবছে কী চিন্তা করছে? সেটা বোঝার মতো অবস্থা তাদের এখন আর নেই। তারা এমন এক জায়গায় চলে গেছে, যেখান থেকে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি না কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর এখনও আস্থা আছে কীভাবে? হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, অথচ সর্বোচ্চ আদালত সেটি স্টে করে দিয়ে কৌশলের অবলম্বন করে ছুটির পরে দেওয়া হবে বলে মাসের পর মাস খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আমি জানি না একথা বলার কারণে আদালত অবমাননা হবে কিনা। হলেও কিছু যায় আসে না। কারণ, এখন আর হারাবার কিছু নেই। এখন সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার।’
আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বহুবার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি আলোচনা করে এ পরিস্থিতির পরিসমাপ্তি ঘটান। কিন্তু তারা কিছুতেই কর্ণপাতই করেছেন না। তারা সব সময় বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু হবে। এই সংবিধান তো আপনারা কেটেকুটে শেষ করে দিয়েছেন। আপনাদের সুবিধামতো আপনারা সংবিধান সাজিয়ে নিয়েছেন, কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসতে পারবেন সেই রকম করে।’
‘মানুষ নিজের বাসার ড্রইং রুমেও কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না’ মন্তব্য করে করেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কেউ যদি রেকর্ড করে নিয়ে যায় সেই ভয়তে এখন কেউ কথা বলে না। এমনকি রাজনৈতিক কর্মীরাও পারস্পরিক কথাবার্তা সাবধানে বলেন। কারণ, পারস্পরিক সেই কথার কারণে আবার সমস্যা না হয়।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বক্তব্য দেওয়ার দিন শেষ। এখন আমাদের কাজে নামতে হবে, দেশরক্ষার কাজে। খালেদা জিয়া শুধু একজন ব্যক্তি বা বিএনপির চেয়ারপারসন নন। তিনি দেশের গণতন্ত্রের ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাকে এভাবে গায়ের জোরে কারাগারে আটক রাখার অর্থই হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা, জনগণের অধিকার হরণ করে একক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা।’
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডের রায়ের পর চার মাস ধরে বন্দি খালেদা জিয়া কুমিল্লার আরও দুটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন। ফলে ঈদের আগেই তার মুক্তির আশা করেছিলেন বিএনপি নেতারা।কিন্তু হাইকোর্টের দেওয়া ওই জামিন আদেশ আপিল বিভাগ ২৪ জুন পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়ায় ঈদের আগে খালেদার মুক্তি আটকে গেছে।
বিএনপি মহাসচিবের দাবি, তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যেভাবে আটক রাখা হয়েছে তা ‘সম্পূর্ণ অন্যায় ও নজিরবিহীন’। “আমার বুঝতে পারি না- এখনো আমাদের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা আছে কীভাবে? হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে, সর্বোচ্চ আদালত থেকে এটাকে স্থগিত করে রেখে কৌশলে এই যে ছুটির পরে দেওয়া হবে, ছুটির পরে দেয়া হবে করে মাসের পর মাস বেগম জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে।“আমি জানি না একথা বললে আদালত অবমাননা হবে কিনা। হলেও কিছু যায় আসে না। কারণ এখন আমাদের হারাবার কিছু নাই, আমরা সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি। তাই এখন সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার।“
ফখরুলের অভিযোগ, এখন কেবল মানুষের ভোটের অধিকার নয়, কথা বলার স্বাধীনতা নয়, জনগণের নাগরিক অধিকারও ‘ধ্বংস করে’ ফেলা হয়েছে। “আজকে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আসুন পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর কাছে সেই দোয়া চাই, তিনি যেন আমাদের সেই শক্তি দেন, সেই শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ স্বৈরাচার দানবকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে আমরা জেগে উঠতে পারি। দেশনেত্রীকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।”
ফখরুল বলেন, ‘এখন সময় এসেছে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, রুখে দাঁড়াবার। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে দেশকে রক্ষা করা।’