পঞ্চগড়ে মরিচে টেঁপা পচা রোগ, বিপাকে চাষিরা
ডেস্ক রিপোর্ট : আবহাওয়া ও পরিবেশ দুর্যোগের ফলে পঞ্চগড়ের লাল সোনা বলে খ্যাত মরিচের আবাদে টেঁপা পচা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবছর আশংকাজনকভাবে ফলন কমে গেছে। বাজারে চড়া মূল্য থাকলেও ফলন কম হওয়ার কারণে খুব বেশি লাভের মুখ দেখতে পারছেন না মরিচ চাষিরা। চাষিদের অভিযোগ কৃষি বিভাগের কোন সহায়তা মিলছে না। তাদের পরামর্শমূলক সহায়তা পেলে লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হতো বলে জানান তারা।
বোদা উপজেলার হাবসি পাড়া গ্রামের মরিচ চাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, মরিচের দাম ভালো আছে। চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা মণ। কিন্তু টেঁপা পচা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবার খুব বেশি লাভ হবে না। আর দাম স্থিতিশিল থাকলে লোকশান হবে না। কিন্তু কমে গেলে চাষিদের লোকশান গুণতে হবে। কারণ এবার ফলন কম হয়েছে।
জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে আটোয়ারী এবং বোদা উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা প্রতিবছর হাজার হাজার টন মরিচ উৎপাদন করে থাকে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে পঞ্চগড়ের এই শুকনো মরিচ। অন্যান্য ফসলের থেকে মরিচে উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি অল্প সময়ে বেশি লাভ করা যায় বলে এ অঞ্চলের চাষিরা প্রতিবছর এই আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। কিন্তু এবছরের চিত্রটা মরিচ চাষিদের জন্য বিষাদের। চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে মরিচের আবাদে ছড়িয়ে পড়েছে টেঁপা পচা রোগ। ফলে গাছের চেহারা ভাল থাকলেও মরিচে পচন ধরছে। আবাদের অর্ধেক মরিচেই এই রোগ ধরেছে। এদিকে বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাবার কারণে পাকা মরিচ শুকাতে পারছে না চাষিরা। ফলে ঘরে স্তুপ করে রাখার কারণে পচে যাচ্ছে পাকা মরিচ। বৃষ্টিপাতের জন্য ক্ষেতে পানি জমে যাওয়া এবং তুলতে না পারার কারণে গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মরিচ।
চাষিদের অভিযোগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ে জানানোর পরেও খোঁজ খবর নিচ্ছে না কেউই। এই দপ্তর থেকে দুর্যোগের মুহূর্তে কৃষকদের পরামর্শ দিলে চাষিরা দ্বিগুণ লাভবান হতো বলেও মনে করেন তারা।
আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে
চাষিরা বলছে, কম সময় এবং কম খরচে মরিচের আবাদে লাভের মাত্রা বেশি। বিগত বছরে তারা অনেক মুনাফা আয় করেছে। তাই এবছর অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে চড়া সুদের ঋণ নিয়ে মরিচের আবাদ করেছেন তারা। অনেকে ধার দেনাও করেছেন। কিন্তু চলতি বছরে মরিচের পচন রোগের কারণে ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে।
আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক কলিমউদ্দিন (৫০) জানান, ‘গত বছর ১০ শতক জমিতে মরিচের আবাদ করিছিনু। ভাল লাভ হইছিল। এইবার কিস্তির লোন নিয়া বিঘাখানেক কইছু। কিন্তুক টেঁপা পচা রোগে মরিচ পচে যাছে। কুনু অফিসার দেখিবা আসে না হামাক। দামটা ঠিক রহিলে বাচি যাম। কমিলে মরিম বাহে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামুলক বেশি হওয়ায় মরিচে এ্যানথ্রাক্সনোস (পচন) রোগের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকের পাশে রয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পঞ্চগড় জেলায় চলতি বছরে ৯৫০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বাঁশগাইয়া, বিন্দু জাতের মরিচের চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই জেলা থেকে প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হবে।