হঠাৎই পাকিস্তানে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে শিয়া মতাবলম্বীরা!
পাকিস্তানে গত ২ বছরে শিয়া জনগোষ্ঠীর ১৪০ জনের মতো পুরুষ নিখোঁজ হয়ে গেছেন। তাদের প্রত্যেকের পরিবার প্রায় একই ধরনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। পরিবারের দাবি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে তুলে নিয়ে গেছে এবং এরপর থেকেই তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। করাচিতেই সব থেকে বেশি এমন ঘটনা ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষের দাবি তারা সিরিয়াতে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
করাচিতে নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন সেখান বিবিসির কর্মী সিকান্দার। তার প্রতিবেদনটি পরিবেশন করেছেন বিবিসি বাংলার সহকর্মী শাহনাজ পারভীন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের করাচিতে শিয়া অধ্যুষিত একটি এলাকা। সেখানে একটি ঘরে জড়ো হয়েছেন স্বজন হারানো কয়েকজন নারী। কাঁদতে কাঁদতে তারা বর্ণনা করছিলেন কিভাবে তাদের স্বামী, ছেলেদের অথবা ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে
এই পরিবারগুলোর দাবি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের স্বজনদের তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। স্থানীয় একটি মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে নাঈম হায়দার নামের একজন পুরুষকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মুখোশ পড়া সশস্ত্র বাহিনীর কিছু লোক। তাদের সাথে হেটে যাচ্ছে পোশাক পরা পুলিশের কয়েকজন। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা এটি। গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে কেবলই ইরাক থেকে দেশে ফিরেছিলেন নাঈম হায়দার। তার স্ত্রী এরপর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু বাবার সাথে তার কোনো দিন দেখা হয়নি।
করাচির কেন্দ্রে নিম্নমধ্যবিত্তদের একটি এলাকা গুলবাহাও। মূলত শিয়া অধ্যুষিত এলাকা এটি। এই এলাকা থেকেই ৭ জন পুরুষ নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের পরিবারের সবার বর্ণনা একই ধরনের। তবে শিয়াদের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিরা বলছেন, এই নিখোঁজ ছেলেগুলোর সাথে সিরিয়াতে ইরান সমর্থিত একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ তাদের বলেছে।
স্থানীয় একজন ব্যক্তি রাশেদ রেজভী এই নিখোঁজদের মুক্তির জন্য ক্যাম্পেইনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন এসে আমাদের সাথে দেখা করেছে। তারা আমাদের আন্দোলন বন্ধ করার ব্যাপারে বলছে। তারা আরও বলেছে এই ছেলেগুলো সিরিয়াতে দায়েশ ও আল কায়দার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলো। আমি বলেছি তাই যদি হয় তাহলে তাদের বিচার করা হোক। আর তা না হলে দেশে আদালত রাখার কি দরকার।
এদিকে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনকে এ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা মনে করেন অনেকে সিরিয়া থেকে ফিরে এসে পাকিস্তানে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। কিন্তু নিখোঁজদের পরিবার বলছে তাদের ভাগ্যে কি জুটেছে অন্তত সেই খবরটুকুই যেন তাদের জানানো হয়।