নিউজিল্যান্ডকে কি গ্রাস করে নিচ্ছে চীন!
বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের চোখের সামনে আরেক পরাশক্তি চীনের প্রভাব বলয়ে চলে যাচ্ছে প্রশান্ত মহাসগরীয় দেশ নিউজিল্যান্ড। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে দেশটিকে ক্রমেই গ্রাস করে নিচ্ছে চীন।
নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশের সমন্বয়ে গঠিত নজরদারি সংস্থা ‘ফাইভ আই’-এর যৌথ এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে। নজরদারি সংস্থা ফাইভ আইয়ের বর্তমান সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড।
কানাডার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপ সম্প্রতি ‘আশঙ্কাজনক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চীনকে বিশ্বদরবারে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে তুলে ধরতে বহুমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। জিনপিংয়ের এ কৌশলের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্ককে এরই মধ্যে জিনপিং ‘দৃষ্টান্তস্বরূপ’ বলে অভিহিত করেছেন।’
প্রতিবেদনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এক বিশ্লেষক বলেছেন, নিউজিল্যান্ড অনেক বেশি চীন ঘেঁষা। মার্কিন কংগ্রেসের ‘যুক্তরাষ্ট্র-চীন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক মূল্যায়ন কমিশনের’ কাছে দেয়া বক্তব্যে সিআইয়ের পিটার ম্যাটিস মন্তব্য করেছেন, নিউজিল্যান্ডের সব দলেরই চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ম্যাটিসের ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে।
তাছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিল ইংলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ওঠাবসা ছিল এমপি জিয়ান ইয়াংয়ের। ইয়াং একসময় চীনা গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। সেখানে গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের তিনি ইংরেজি শেখাতেন। তার বিরুদ্ধে এমন কথাও উঠেছিল, তিনি নিজেও চীনা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন।
আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে
সিআইয়ের কর্মকর্তা পিটার ম্যাটিস শুনানিতে দেয়া সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড চীনা কমিউনিস্ট পার্টির হস্তক্ষেপের কারণে বড় সমস্যার মুখে রয়েছে। দুই দেশেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টি খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে বা রাজনৈতিক মূল চালিকাশক্তির ভেতরে ঢুকে গেছে।
পার্থক্য হচ্ছে, দুই দেশের প্রতিক্রিয়ায়। নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিল ইংলিশ এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন- দু’জনই কোনো সমস্যা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। আমি মনে করি ফাইভ আইয়ের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিবেচনা করা উচিত, রাজনৈতিকভাবে একেবারে ভেতর থেকে চীন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়া নিউজিল্যান্ডকে আর সংস্থাটিতে রাখা ঠিক হবে কিনা।’
লেবার পার্টির সভাপতি নাইজেল হাওর্থ ম্যাটিসের বক্তব্যের কথা জেনে মন্তব্য করেছেন, ম্যাটিস ঠিক ‘কী বা কার উদ্দেশে’ কথা বলেছেন তা তার কাছে পরিষ্কার নয়।
লেবার পার্টির গ্রহণ করা সব অনুদান নিউজিল্যান্ডের নির্বাচনী আইনের ধারার মধ্যে থেকেই গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫ হাজার ডলারের বেশি যেকোনো পরিমাণ অনুদানের তথ্য, দাতার নামসহ নিউজিল্যান্ডের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। চাইলে যে কেউ পরীক্ষা করে দেখতে পারে।
নিউজিল্যান্ডের আরেক রাজনীতিবিদ সিমন ব্রিজেস দাবি করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিল ইংলিশ তথ্য পাচার করতেন এমন তথ্য ‘সম্পূর্ণ অসত্য’। ব্রিজেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি এ বিষয়ে (চীনের প্রভাব) কোনো প্রমাণ দেখিনি।
নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে দেশের রাজনীতিকে অন্য কোনো দেশের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার কার্যকর ব্যবস্থা।’
কিন্তু ভিন্ন মতও রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যান্টারবুরির চীন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যানি মারি ব্র্যাডি একাধিকবার নিউজিল্যান্ডে চীনের বাড়তে থাকা প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। হিলারি ক্লিনটনও সাম্প্রতিককালে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, নিউজিল্যান্ডের উচিত ‘ঝুঁকি খতিয়ে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া। – আরটিএনএন