ঋণের সুদহার না বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ
ডেস্ক রিপোর্ট : ঋণের সুদহার হঠাৎ করেই না বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নতুনভাবে খেলাপি ঋণ সৃষ্টির ঝুঁকি এড়াতে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আর্থিক বাজার সুদহারে সামপ্রতিক বৃদ্ধির সূত্রে নতুন ঋণ মঞ্জুরি ছাড়াও বিদ্যমান ব্যাংক ঋণ হিসাবগুলোতেও আকস্মিক অযৌক্তিক মাত্রায় উচ্চতর সুদহার নির্ধারণের কিছু কিছু দৃষ্টান্ত সমপ্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে; যা ঋণগ্রহীতাদের পরিশোধ সামর্থের ও আর্থিক সঙ্গতির ওপর অনভিপ্রেত চাপ সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি বিনিয়োগ ও উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কোনো ঋণের মঞ্জুরিপত্রে সুদহার অপরিবর্তনশীল উল্লেখ থাকলে ঐ ঋণের সুদহারে সংশ্লিষ্ট ঋণের মেয়াদকালে ঊর্ধ্বমুখী কোন পরিবর্তন করা যাবে না। শুধুমাত্র ঋণের মঞ্জুরিপত্রে সুদহার পরিবর্তনশীল উল্লেখ থাকলেই ঐ ঋণের সুদহারে বিশেষ কিছু নিয়মে সংশোধন করা যবে। এক্ষেত্রে ঋণের সুদহার বছরে একবারের বেশি বাড়ানো যাবে না; ঋণের সুদহার বাড়ানো বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠ গ্রাহককে কমপক্ষে তিনমাস আগে নোটশ প্রদান করতে হবে। গ্রাহককে অবহিত না করে কোন ঋণের সুদহার বৃদ্ধি করা যাবে না; মেয়াদি ঋণের বেলায় প্রতিবার অনধিক শূণ্য দশমিক ৫০ শতাংশ এবং চলতি মূলধন ও অন্যান্য ঋণের বেলায় প্রতিবার অনধিক এক শতাংশ মাত্রায় পরিমিত রাখতে হবে। নতুন ঋণ মঞ্জুরির সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিআরপিডি কর্তৃক ইতোপূর্বে ইস্যুকৃত পরিপত্রগুলোর নির্দেশনা বলবত্ থাকবে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেয়। কেননা, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এসে অধিকাংশ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর হার) বেড়ে যায়। প্রায় ২০ টি ব্যাংকের আমানতের চেয়ে ঋণ বেড়ে যায়। ফলে এডিআর হার কিছুটা কমিয়ে দিয়ে আগ্রাসী ঋণের লাগাম টেনে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য এডিআর হার সমন্বয়ের জন্য ঋণের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে আমানত সংগ্রহে উঠেপড়ে লেগে যায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ কারণে বাড়াতে হয় আমানতের সুদহার। আমানতের সুদহার কিছুটা বাড়িয়ে অধিক মাত্রায় ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দেয় ব্যাংকগুলো। যা নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এদিকে ঋণের সুদহার কমাতে ব্যাংক মালিকরা বেশকিছু সুবিধা নিলেও কমছে না ঋণের সুদহার। সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রীও ব্যাংকঋণের সুদহার কমাতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন। অবশেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের সুদহার কমাতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
অন্যদিকে, আরেক নির্দেশনায় আমানত ও ঋণের সুদহার যৌক্তিকীকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রকার ঋণের সুদহার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে। ঋণের সুদহার অযৌক্তিক মাত্রায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে যা উদ্বেগজনক। এ প্রেক্ষিতে, উত্পাদনশীল খাতসহ বিভিন্ন খাতে ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের লক্ষ্যে ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তাঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতে ঋণ এবং আমানতের গড়ভারিত সুদ হারের ব্যবধান ৪ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান) ৫ এর মধ্যে সীমিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন তা কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।