রাজধানীতে শুরু হয়েছে ঈদকেন্দ্রিক কেনাবেচা
নিউজ ডেস্ক: আজ শুক্রবার ১৫ রমজান, এখনও ঈদের বাকি ১৫ দিন। রমজানের তৃতীয় শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। রমজান শুরুর প্রথম দুই শুক্রবার শপিং সেন্টারগুলোতে তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি। তবে বিপণিবিতানগুলোতে আজ কিছুটা ঈদকেন্দ্রিক কেনাবেচা দেখা যায়। বিক্রেতারা প্রত্যাশা করছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসে, কেনাকাটার পরিমাণ ততই বেড়ে যায়। ক্রেতাদের পকেটে বোনাসের টাকা এসেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুরাদমে ঈদের বেচাকেনা শুরু হবে।
নগরীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়া বিপণিবিতানগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা। মার্কেটে দুপুরের দিকে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর মানুষ। অনেকেই এসেছেন পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা সারছেন। দুপুরে কড়া রোদ থাকায় ছিল অনেক গরম। ঈদে কাকে কী দেবেন, তার তালিকা তৈরি করে নিয়ে এসেছেন অনেকে। পছন্দের জিনিসটি খুঁজে পেতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন। অনেকে পোশাক দেখে, নাড়াচাড়া করে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে যাচ্ছেন অন্য দোকানে। কেউ আবার ঝটপট কিনে ব্যাগ ভরে হাঁটা দিচ্ছেন বাড়ির পথে।
নিউমার্কেটের পুরো চত্বর ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি বিভিন্ন পণ্যের দোকান তেমনি এর পুরো এলাকার খোলা ময়দানে বসেছে বিভিন্ন খুচরো পণ্যের বাজার। মার্কেটে, নারীদের পোশাক সামগ্রী শাড়ি, থ্রিপিস, শিশুদের পোশাক, থান কাপড়ের দোকান, জুয়েলারি শপ, ব্যাগ, স্যান্ডেল-জুতা, শিশুদের খেলনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য পণ্যের সমাহার। মার্কেটের মধ্যে ভিড় দেখা যায়, কাপড়, শাড়ি ও শিশুদের পোশাকের দোকানে।
বেশিরভাগ পরিবার দল বেঁধে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। বাবা-মায়ের হাত ধরে পছন্দের পোশাক কিনতে কলাবাগান থেকে এসেছে ছোট্ট অথৈ।
অথৈর মা সুস্মিতা চৌধুরী জানালেন, এখনও ঘুরে ঘুরে দেখছি। পছন্দ করে উঠতে পারছি না। এ গরমে মেয়ের জন্য সুতি কাপড়ের জামা খুঁজছি কিন্তু যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে সবই সিল্ক নয়তো জর্জেট। আরও দোকান আছে খুঁজে দেখি। না হলে কাপড় কিনে বানাতে হবে। ছোটদের পোশাকের দাম তুলনামূলক বেশি জানালেন কয়েকজন অভিভাবক।
নিউমার্কেটে সুমনা ফ্যাশন হাউসের বিক্রেতা মো. নাসির খান বললেন, অনেকেই এখন বাচ্চাদের পোশাক কিনে ফেলছেন। কয়েকদিন পর নিজেদের কাপড় কিনবেন। নারী-শিশুদের কাপড়ের ভিড়ের কয়েকদিন পর ছেলেদের কেনাকাটা বাড়ে।
ধানমন্ডির বাসিন্দা আইরীন চৌধুরী, স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা সারছেন। তিনি বললেন, সন্তানদের জন্য কেনা শেষ, এবার আমার জন্য একটা থ্রিপিস কিনব। পছন্দ হচ্ছে না। তাই এখনও কেনা হয়নি।
শাড়ির দোকানে গিয়ে দেখা গেল, বেশিরভাগ বয়স্ক নারী শাড়ি কিনছেন। তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে সুতি ও সিল্ক শাড়ি।
আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে
কথা হলো রাজধানীর মুগধা থেকে আসা সাফিয়া জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি সবসময় সুতি শাড়ি পরি। তবে, ঈদের দিন মেয়েরা চায় মা একটু গর্জিয়াস শাড়ি পরুক। মেয়েদের ইচ্ছা মাথায় রেখে একটা সুতি ও একটি সিল্ক শাড়ি কিনলাম।
ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, বেল্ট, মানিব্যাগ নিউমার্কেটে সস্তায় পাওয়া যায়। তাই ছেলেরা বন্ধুদের সঙ্গে এসে এগুলো কিনছে। ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় জিনস ও পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকায়। তবে প্যান্ট ও শার্টের দোকানে ভিড়টা একটু বেশি লক্ষ্য করা যায়।
নিউ মার্কেটের ভেতরে ভিড় থাকলেও দোকানিদের মন ভালো নেই। বেশিরভাগ দোকানিই জানালেন, ঈদের মার্কেট এখনও জমে ওঠেনি। তবে গতবারের চেয়ে এবার বেশি বিক্রি হবে।
নিউমার্কেটের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত যা বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশ শিশু আইটেম। মেয়েদের শাড়ি, থ্রি পিসসহ অন্যান্য জামাগুলো বিক্রি হলেও তার হার খুবই কম। আর ছেলেদের আইটেমগুলো পুরোপুরি প্রদর্শনীতেই শোভা পাচ্ছে।
চাঁদনীচকে নানান পোশাকের সমাহার সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রতিবছরের মতো এবারো বিভিন্ন পোশাকের নাম দিয়েছে দোকানিরা। এতে বিরক্তি প্রকাশ করলেন অনেক ক্রেতা। তারা বলেন, জামার কাপড় একই কিন্তু খালি সিরিয়ালের নায়িকার সঙ্গে পোশাকের নাম রেখে দিচ্ছে। এটা বিরক্তিকর।
চাঁদনীচকের জাকির ফেব্রিকসের বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, তরুণীদের চাহিদার প্রথম সারিতে আছে ভারতীয় পোশাক। এসব পোশাকের মধ্যে প্রাচী, মীরা, আয়েশা টাকিয়া, লেহেঙ্গা, রেডিমেড সেলাই ছাড়া, সেলাইসহ থ্রি-পিস অন্যতম। এসব পোশাকের দাম দেড় হাজার থেকে পাঁচহাজার টাকার মধ্যে। কলকাতায় গতবারের মতো এবারও প্রচুর লোক ছুটেছে তাই বেচাবিক্রি গেল কয়েক বছরের চেয়ে কম। এছাড়া অনলাইনে বেচাকেনাও বেড়েছে। তবে যারা খুব রুচিশীল ও খুঁতখুঁতে স্বভাবের যারা তারা সবসময় বাজারমুখী।
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও বিপণিবিতানের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন টেইলার্স মালিকেরাও। অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদের আগে এ সময়টাতে কাজের চাপ কয়েকগুণ বেশি বলে জানালেন মাস্টার লেডিস টেইলার্সের মালিক ওসমান গণি।
থ্রি-পিসের কাপড়ের দোকানে নানান বয়সের মেয়ে ও নারীর ভিড় দেখা যায়। তারা পছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে কাপড় কিনতে লেইস ও ওড়ানার দোকানে ছুটছেন। অনেকে আবার মিলিয়ে চুড়ি ও অলংকার কিনছেন।
এদিকে বিপণিবিতান কেন্দ্রিক যানজটও ছিল তীব্র। সপ্তাহের ছুটির দিনে এমন জ্যামে অনেকে হাসপাস করেছিলেন। কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব ও বাটা সিগন্যালের ট্রাফিক পুলিশরা জ্যাম নিয়ন্ত্রণে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন।