‘আমার নাম বিকৃত করা প্রধানমন্ত্রীর সমীচীন হয়নি’
ডেস্ক রিপোর্ট : : সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাম বিকৃতি করেছেন এমন অভিযোগ করে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সমীচীন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বি চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম কথা আমার নাম বদরুদ্দোজা, এই নামটি আমাদের প্রিয় রাসুলের একটি সুন্দর পদবী। এর অর্থ হচ্ছে: ঘোর অন্ধকারে উজ্জ্বল পূর্ণ্ চন্দ্র। এই পবিত্র নামটি আমার স্নেহময় নানা আমার জন্য রেখেছিলেন।’
‘এই নামটিকে বিকৃত করে (অমুক কাকা) বলা প্রধানমন্ত্রীর সমীচীন হয়নি। পবিত্র কোরানুল কারিমে নাম বিকৃতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা স্মরণে রাখলে কৃতজ্ঞ থাকবো।’
শুক্রবার একটি ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে বিকল্প স্বেচ্ছাসেবকধারা এই ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গত বুধবার ভারত সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বি চৌধুরীর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বদু কাকারে বিএনপি বেশি দিন রাখে নাই। মাথায় পোটলা দিয়ে রেললাইনের তল দিয়ে দৌড় মারতে হয়েছে তাকে। এ রকম অবস্থা তার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল সেটাও তার মনে রাখা উচিত। বদরুদ্দোজা চৌধুরী কী বলল না বলল, আমার জবাব দেয়ার বিষয় না। ওনি আবার (খালেদার) মুক্তির দাবি করেন। রেললাইন দিয়ে দৌড়ালেন, আবার মুক্তির দাবি করেন। বলে না, মেরেছ কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না?’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির সাবেক এই নেতা বলেন, ‘কাউকে তেল মারা বা খুশি করার জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করিনি। তার ব্যাপারে আইনের শাসন লঙ্ঘিত হয়েছে। আদালতের আদেশ সত্ত্বেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।’
‘ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বলেন, ‘ভারতকে কী কী দিয়েছেন তা জনগণকে জানানো উচিত ছিল। ভারত আমাদের ভালো বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে। তাই তাদের সহযোগিতা ভোলার নয়।’ তিনি কবিগুরুর একটি কবিতার পংক্তি উল্লেখ করে বলেন, যতটুকু দিবে ততটকু নিবে, কিন্তু আমরা কী পেলাম তিস্তার পানি নাই, পদ্মা পানিশূন্য।
বি চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, শুধু আওয়ামী লীগের দাবিকৃত (পরবর্তী সময়ে আমার সমর্থিত) তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করার প্রয়োজনে তাড়াহুড়ার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতো। ওই সময়ে আমার দল বিএনপি নির্বাচনকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য ব্যবহার করেনি। ওই বিল পাস করার পরেই ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।’
আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে
‘অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল অসম্পূর্ণ্, প্রশ্নবিদ্ধ এবং ওই নির্বাচন বিনাভোটে সব সংসদ সদস্য সৃষ্টি করেছে। ভোটারবিহীন ওই নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান সরকার পাঁচ বছর কাটিয়ে দিলে। চার বছর হয়ে গেল কিন্তু আপনারা ক্ষমতা ছাড়লেন না।’
ইফতারের আগের বক্তৃতায় এরশাদের নাম উল্লেখ না করে বি চৌধুরী বলেন, ‘সংসদে একটা জামাই আদরের দল আছে। তাদের কাজ শুধু তেল মারা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতকে মাসে পাঁচ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু তার কাজ কী? কী করেন তিনি?’
বি চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট সৎ নেতৃত্বের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির মঞ্চ হিসেবে ইতিমধ্যে জনগণের মনে ঝড় তুলেছে। জনগণের এই মঞ্চ দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে।যা অন্য দুটি রাজনৈতিক শক্তিকে ভারসাম্যের মধ্যে রাখতে পারবে। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনও আমাদের সাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।’
জনগণ ভোট দিলে যুক্তফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনের পর পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে বলেও জানান তিনি।
বি. চৌধুরী যুক্তফ্রন্টের দাবির পুনরুল্লেখ করে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন না হলে আগামী সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের ১০০ দিন আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে যাতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা তাদের পদমর্যাদার সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে না পারেন।’
মাদক ব্যবসার নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি দেশের প্রচলিত আইনে মাদক ব্যবসায়ীদের বিচার করার দাবি জানান। মাদক ব্যবসা এরশাদের আমলে শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ডা. বি. চৌধুরী যখন শিক্ষক আমি তখন ছাত্র, ওনার মতো একজন দেশবরেণ্য ব্যক্তির নাম বিকৃতভাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কাজ করেছেন।’
তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নেওয়ার জন্য ডা. বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের প্রতি আহ্বান জানান।
বিকল্প স্বেচ্ছাসেবকধারার সভাপতি বিএম নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রউফ মান্নান, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, শাহ আহম্মেদ বাদল, আবুল বাশার, গণ সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি এস আই মামুন প্রমুখ।