সোমবার, ৪ঠা জুন, ২০১৮ ইং ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

জয়ের আপত্তিকর প্রশ্নে খেপেছেন তানিয়া

বিনোদন ডেস্ক : ‘তানিয়া হোসাইনের ক্যারিয়ার এবং ক্যারেক্টার নিয়ে বলুন।’ একুশে টিভির ‘উইথ নাজিম জয়’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির কাছে এভাবেই প্রশ্ন করেন শাহরিয়ার নাজিম জয়, অভিনয়শিল্পী, উপস্থাপক ও চিত্রপরিচালক। যাঁর ‘ক্যারিয়ার এবং ক্যারেক্টার’ নিয়ে উপস্থাপক জানতে চেয়েছেন, তিনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। গণমাধ্যমে একজন শিল্পীকে নিয়ে এমন আপত্তিকর প্রশ্ন করায় সেই টিভি চ্যানেল আর উপস্থাপকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিনয়শিল্পী এবং উপস্থাপক তানিয়া হোসাইন।

জয় এখন ব্যস্ত উপস্থাপনা নিয়ে। তাঁর অনুষ্ঠানে এসে অনেক শিল্পী উপস্থাপকের তির্যক প্রশ্নের মুখোমুখি হন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একুশে টিভির ‘উইথ নাজিম জয়’ অনুষ্ঠানে তানিয়া হোসাইনের ‘ক্যারেক্টার’ নিয়ে প্রশ্ন করায় খেপেছেন তিনি। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

জনপ্রিয় গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে গত ১৬ মে তানিয়া হোসাইনের বাগদান হয়েছে। দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বাগদান অনুষ্ঠানের পর কেউ কেউ তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদগার করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন তানিয়া। আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তানিয়া বলেন, ‘গণমাধ্যমের দায়িত্ব অনেক। একটি গণমাধ্যম চাইলেই যে কাউকে দিয়ে কারও চরিত্রের সনদ দিতে পারে না। ব্যাপারটি তেমন হয়েছে, উপস্থাপক জয় দেশের মানুষের কাছে আমার চারিত্রিক সনদ দিচ্ছেন। আর এই কাজটি করছেন তাঁরই আমন্ত্রিত অতিথির মাধ্যমে! খুব কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আমি অপমানিত ও অসম্মানিত বোধ করেছি। এই ব্যাপারে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এটা অসম্মানজনক এবং অপমানজনক প্রশ্ন। নারীর প্রতি অসংবেদনশীল মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এক ধরনের পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা এই প্রশ্নে আছে, যেখানে নারীর চরিত্রকে নিরীক্ষা করা হয়, যাচাই করা হয়। সেখানে আমাদের হালের এই অভিনেত্রী তানিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।’

এটা শুধুই উপস্থাপকের সমস্যা, নাকি এখানে টেলিভিশনেরও দায় আছে? রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘উপস্থাপকেরই সমস্যা। টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষেরও উচিত এ উপস্থাপককে সতর্ক করা। এটা যেহেতু রেকর্ড করা অনুষ্ঠান, প্রশ্নটি বাদ দেওয়া যেত। সে হিসেবে বলতে পারি, এই অনুষ্ঠান প্রচার করা উচিত হয়নি। প্রচার করলেও ওই অংশটুকু বাদ দেওয়া উচিত ছিল। আমি এর আগে লিখেছিলাম, “পপি এবং পুরুষতান্ত্রিক সাংবাদিকতা”। তখন শাকিল খান পপিকে বলেছিল, ওর চরিত্র খারাপ। আমি বলেছিলাম, শাকিলের চরিত্রের পরীক্ষা কে নেবে? চরিত্র মানে সব সময় নারীর সঙ্গে মিলিয়ে দিই, পুরুষকে কেউ এই প্রশ্ন করবে? কেউ করবে না। হালের তানিয়া থেকে পুরাকালের সীতা, সবাইকে সতীত্বের পরীক্ষায় বসতে হয়। পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে আমরা বের হতে পারিনি। টিভি চ্যানেলটির আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। এই অনুষ্ঠান তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত ছিল। টেলিভিশন চ্যানেল দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি।’

আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে

গত বুধবার রাতে টিভিতে প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দৃষ্টিকটু লেগেছে ঠিকই কিন্তু এটা তো ধরন, মোটেও ইচ্ছে করেই করিনি। কথাটি এক সুরে বললে এক রকম, আরেক সুরে বললে আরেক রকম। এটা ভুল-বোঝাবুঝি। বুঝতে ভুল ছিল, প্রশ্নটা বলাও ভুল ছিল। তবে উদ্দেশ্য ভুল ছিল না। টেলিভিশন শোতে চরিত্র নিয়ে কথা বলতে পারি না। কিন্তু এটাও ঠিক, আমরা একটি উন্মুক্ত আলোচনা করছি। উন্মুক্ত আলোচনায় আমরা জিজ্ঞেস করতেই পারি, আপনার ভালো-মন্দ দিক। এটা ঠিক, ‘ক্যারেক্টার’ শব্দটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। প্রশ্নটা দৃষ্টিকটু আমার কাছেও মনে হয়েছে। আবারও বলছি, উদ্দেশ্য দৃষ্টিকটু ছিল না।’

প্রশ্ন দৃষ্টিকটু হয়েছে বলছেন, তাহলে প্রচার করলেন কেন? জয় বলেন, ‘আমি তো নিজে সম্পাদনা করি না। প্রযোজক বা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যদি মনে করত কথাটি আপত্তিকর, তাহলে তারা তা বাদ দিতেই পারত।’

‘উইথ নাজিম জয়’ অনুষ্ঠানের প্রযোজক মাসুদুজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘উপস্থাপক জয়ের এভাবে প্রশ্ন করা ভুল ছিল। তবে পুরো অনুষ্ঠান দেখলে সবার ধারণা পরিষ্কার হবে। জয় যখন তানিয়ার ক্যারিয়ার ও ক্যারেক্টার নিয়ে অতিথিকে প্রশ্ন করছেন, তখন অতিথি বলেছেন, “আমি তানিয়ার ক্যারিয়ার নিয়ে বলতে পারব, ক্যারেক্টার নিয়ে বলতে পারব না।” আমরা আসলে অনুষ্ঠানকে আনকাট রাখতে চেয়েছি। সবাই যাতে আসল আবহটা পান। তা ছাড়া জয়ের অনুষ্ঠান উপস্থাপনার ধরনটাই এমন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তানিয়া তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘উপস্থাপনা নিয়ে আমার জ্যেষ্ঠ কাউকে জ্ঞান দিতে যাব, এত বড় দুঃসাহস আমার নাই। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে (মঞ্চ, বাণিজ্যিক, কনসার্ট, টেলিভিশন অনুষ্ঠান) আমরা যারা এই কাজটি অত্যন্ত পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা এবং ধৈর্যের সঙ্গে করে চলেছি, তারা জানি কতখানি অভিজ্ঞতা, শব্দ চয়ন, শব্দের সঠিক প্রয়োগ, বাক্যগঠন, বাক্যের উদ্দেশ্য-বিধেয় নিয়ে ভেবে তারপর কাজটি কত যত্ন নিয়ে করে থাকি। আপনি যখন উপস্থাপক, তখন আপনার অতিথি বা যাঁর সম্পর্কে কথা বলছেন, আপনার কোনো অধিকার নেই তাঁকে অসম্মান করে কথা বলার। এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করব, যা একটি দেশের প্রচারমাধ্যমে প্রচার হওয়া কতটা শোভন বা সমীচীন, সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন।’

তানিয়া আরও লিখেছেন, ‘ফান আর অপমানের পার্থক্য বোঝার দায়িত্ব একজন উপস্থাপকের পাশাপাশি অনুষ্ঠান প্রযোজকের। একজন প্রযোজক পুরো অনুষ্ঠানের দায়ভার বহন করেন। খালি ৫.৪.৩.২.১.০ অ্যাকশন বলা একজন প্রযোজকের একমাত্র কাজ না। যত মহান উপস্থাপকই হোক, নিয়ন্ত্রণ কিন্তু প্রযোজকের হাতে। নাকি তাও নাই? আর অসাধারণ উপস্থাপনা হয় যখন, তখন কিন্তু এই আপনাকেই বাহবা দিতে পিছপা হই না আমরাও। তাই ফান শো বলে অন্যের মর্যাদাহানি করে নিজেদের শোর কাটতি বাড়ানোর অপচেষ্টা কতখানি পেশাদারি অথবা আত্মসম্মানের আওতায় পড়ে? কী নিয়ে ফান করছেন?’

Print Friendly, PDF & Email