গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে অবহেলিত নারী শ্রমিকরা স্বাবলম্বী হচ্ছে
গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ২০১৬ সালের ১লা মার্চ হতে বাংলাদেশ ও ডেনমার্ক সরকারের অর্থায়নে পাঁচ বছর মেয়াদী জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলার দুঃস্থ, অসহায়, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাদের নিয়ে গ্রুপ ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। মাটির কাজে ৩০/৪০ জন সদস্য এবং এইচবিবি/ইউড্রেন/ঘাটলা/ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ, খাল খনন, টয়লেট নির্মাণ, বাজার উন্নয়ন/প্রটেকশন, কার্পেটিং সড়ক/সিসি সড়ক কাজে ১২/১৮ জন সদস্য গ্রুপ ভিত্তিক কাজ করে থাকে।
ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গ্রুপের সদস্য এবং রাস্তা ঘাট সিলেকশন করা হয়। জেলা কারিগরী পরামর্শক (ডি,টি,এ) প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ, উপজেলা প্রকৌশলীসহ অন্যান্যরা এলসিএস সদস্যাদের দুইদিনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ সর্ম্পকে ধারণা প্রদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে চুক্তি মাধ্যমে এলসিএস সদস্যা রাস্তাঘাট সহ সব কিছুর কাজ শুরু করেন।
২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১ কোটি ৭২ লক্ষ ২৪ হাজার ৪১৬ টাকা ব্যয়ে ১৫টি স্কীমে যাহার মধ্যে মাটির রাস্তা, ইউড্রেন নির্মাণ, স্টোপ প্রটেকশন এবং বাজার উন্নয়ন ২৫০ জন সদস্যের পরিশ্রমে নির্মাণ হয়েছে। কাজ গুলো হচ্ছে পশারগাতী ইউনিয়নের আওতায় ১৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯১১ টাকা ব্যয়ে জানবাগ সড়ক, ১৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ২২০ টাকা ব্যয়ে খড়িকাইন সড়ক। গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আওতায় ২২ লক্ষ ৬২ হাজার ৮১১ টাকা ব্যয়ে সালিনাবক্স বাজার, ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ২৬৪ টাকা ব্যয়ে ফুলার বাজার, ৮৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৫৭ টাকা ব্যয়ে ভাকুড়ী ও কবির খা এইচবিবি সড়কের উন্নয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ২৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬২৪ টাকা ব্যয়ে গোহালা বাজার উন্নয়ন এবং বাটিকামারী ইউনিয়নের ৩৭ লক্ষ ৪৯ হাজার ১৭৮ টাকা ব্যয়ে বাহাড়া আলিম মাদ্রাসা সড়ক ও আলিপুর জিপি সড়ক, ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ৩৭৫ টাকা ব্যয়ে হলুদ ভিটা বাজার উন্নয়ন এবং মহারাজপুর ইউনিয়নে মল্লিক শ্রীরামপুর সড়ক এবং একই ইউনিয়নে ৫০ লক্ষ ২২২ টাকা ব্যয়ে ২টি গ্রুপে এইচবিবি খানকা শরীফ সড়কের কাজ প্রায় সমাপ্তের পথে। ৪ লক্ষ ১৯ হাজার ৮২৮ টাকা ব্যয়ে মহারাজপুর ইউনিয়নের ১৭৩ নং চৌগাছা স্কুলের সিসি সড়কের উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া কাশালিয়া ইউনিয়নে ২টি গ্রুপে গোহালা ইউনিয়নে ২টি গ্রুপে এবং বাটিকামারী ইউনিয়নে ৪টি গ্রুপে মোট ৮টি গ্রুপে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে এইচবিবি মাটির কাজ, বাজার উন্নয়ন ও ইউড্রেন নির্মাণ চলমান। যাহা আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানা যায়।
জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন পাচুরিয়া সড়ক গ্রুপের রুপা বেগম বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়ে ৮ লক্ষ ৯৭ হাজার ৪৩৫ টাকা ব্যয়ে মাটির রাস্তার কাজ সম্পন্ন করেছি। এ রাস্তা গত ৩০ বছরের বন্যার পানির উচ্চতা থেকে অন্তত ২ ফুট বেশী উঁচু করা হচ্ছে। প্রকল্প থেকে চুক্তি মূল্যের সম্পন্ন টাকা আমাদের ব্যাংক হিসাবে দেয়া হয়েছে। আমরা এখান থেকে প্রতিদিন শুধু খোরাকের জন্য ৪০০ টাকা নিচ্ছি। কাজ শেষে লাভের টাকা সবাই সমান ভাবে ভাগ করে নিয়েছি।
মুকসুদপুর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল খালেক বলেন, তৃণমুলের চাহিদার আলোকে স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট ছোট গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা, পাকা রাস্তা, বাজার ঘাটলা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট এলাকার দরিদ্র মহিলাদের মাধ্যমে প্রথমে তাদের প্রশিক্ষণ পরে চুক্তি দিয়ে জলবায়ু সহনশীল করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি দরিদ্র মহিলাদের স্বাবলম্বী ও দক্ষ শ্রমিক হিসাবে রূপান্তর এবং চুক্তি ভিত্তিক কাজ বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
প্রকৌশলী আব্দুল খালেক আরো বলেন, এছাড়া প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শেষে সংশ্লিষ্ট এলসিএস সদস্যদের ৪ মাস ব্যাপী বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিরক্ষতা দুরীকরণ, আইজিএ ট্রেনিং এর মাধ্যমে হাঁস-মুরগি, পশু পালন ও সবজি চাষের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার পথ দেখানো হয় যাতে তারা হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে নিজেদেরকে সমাজ সংসার উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারে। মুকসুদপুর উপজেলায় এই প্রকল্প ভবিষ্যতে চলমান থাকলে অবহেলিত গ্রামীণ রাস্তা ঘাট, ব্রীজ কালভাট, গ্রামীন হাট-বাজার উন্নয়নে আরো ব্যাপক ভুমিকা রাখবে।
ডানিডা (ত্রিপ) এলজিডিই এর মুকসুদপুর গোপালগঞ্জ সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার রায়হান চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মধ্যে বসাবসকারী অতি দরিদ্র নারীদের টেকসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেই মুকসুদপুরে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এই উপজেলায় ২০টি গ্রুপে অন্তত ৫০০ নারী কাজ করে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে।