রাশিয়ায় যাদের শেষ বিশ্বকাপ
স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবলের ‘সাদা পেলে’ খ্যাত জিকো প্রায়ই বলেন, বিশ্বকাপে ভুলের কোনো সুযোগ নেই। এখানে জিততে না পারার যন্ত্রণা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের একজন হয়েও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি জিকো। তারই পরিণতি আছে আরও অনেকেরই। ইয়োহান ক্রুইফ বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। মেসি আর রোনালদোরও তো বিশ্বকাপটা জেতা হয়নি এখনো। বর্তমান ফুটবলে সেরা হিসেবে পরিচিত এমন আরও অনেকেই বিশ্বকাপ না জিতে অবসরে চলে যাবেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই। রাশিয়াতেই তাদের শেষ সুযোগ।
ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের বিতর্কে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নাম বেশ আগেই লেখা হয়েছে। কাল আর পরিবেশগত পার্থক্য সত্ত্বেও এসব বিতর্ক চলবেই। ফুটবল ভক্তদের জন্য অবসরের সঞ্চয় এগুলো। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগটা যদি কাজে লাগাতে পারেন রোনালদো, ইতিহাস সেরাদের সারিতে থাকার জন্য বিতর্কের আশ্রয় নিতে হবে না তাকে। দুই বছর আগে ইউরো কাপ জিতে এরই মধ্যে তিনি নিজেকে অনেকটা উপরে তুলে এনেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ! সে ভিন্ন বিষয়।
শুধুমাত্র একটা বিশ্বকাপ একজন ফুটবলারের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যই বদলে দিতে পারে। ম্যারাডোনাকে নিয়ে বাজে বিতর্কের শেষ নেই। তারপরও আর্জেন্টাইনদের কাছে তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ফুটবল ভক্তরা আজও তাকে নিয়ে পাগলপ্রায়। প্রায় সাড়ে তেত্রিশের রোনালদো রাশিয়া বিশ্বকাপের পর কতদিন জাতীয় দলে টিকে থাকবেন বলা কঠিন। তবে কাতার বিশ্বকাপে সাড়ে সাইত্রিশের রোনালদোকে নিশ্চয়ই দেখা যাবে না!
একজন বিশ্বকাপজয়ী হিসেবে গৌরব রয়েছে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার। ফাইনালে গোল করে দলকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। জয় করেছেন দুটি ইউরো কাপ। ফুটবলে জয় করা সম্ভব এমন কোনো কিছুই বাদ দেননি তিনি। বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার হয়েছেন ২০১০ সালে। বার্সেলোনার জার্সিতে জয় করেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ সম্ভাব্য সব শিরোপা।
এমন সফল একজন ফুটবলারের জন্য বিশ্বকাপের মঞ্চই হতে পারে বিদায়ের উপযুক্ত স্থান। এ কারণেই ইনিয়েস্তা ঘোষণা করে দিলেন, রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আর জাতীয় দলে খেলবেন না। ৩৪ বছরের ইনিয়েস্তা আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্রাত্য হওয়ার আগেই নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে শেষ বিশ্বকাপটাও তিনি জয় করতে পারেন। এবার স্পেনকে ফেবারিটদের তালিকায় শীর্ষেই ধরে রাখছেন অনেকে।
লুইস সুয়ারেজ সময়ের বিচারে শ্রেষ্ঠ ফুটবলার না হলেও ভবিষ্যৎ ফুটবল লেখকরা তাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে বাধ্য হবেন। পরিসংখ্যানের বিচারে তাকে দূরে রাখা যাবে না কখনোই। একজন পূর্ণাঙ্গ স্ট্রাইকার হিসেবে তিনি উরুগুয়ে এবং ক্লাব ফুটবলে সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। সুয়ারেজেরও এটা হতে পারে শেষ বিশ্বকাপ। ২০১০ সালে তার এক দুঃসাহসী সিদ্ধান্তই উরুগুয়েকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিল। হাত দিয়ে গোললাইনে দাঁড়িয়ে বল ঠেকিয়ে লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। তবে উরুগুয়ে সেই ম্যাচটা জিতে যায়। সেমিফাইনাল খেলে। সেই উরুগুয়েকে নিয়ে আবারও বিশ্বকাপে তিনি। এবার কী দারুণ কিছু করতে পারবেন জাতীয় দলের জার্সিতে ৯৭ ম্যাচে ৫০ গোল করা সুয়ারেজ। ৩১ বছর ৫ মাস বয়সী এই তারকাকে চার বছর পর কাতার বিশ্বকাপে দেখা যাবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়।
রোনালদো, ইনিয়েস্তা এবং সুয়ারেজের মতো আরও অনেকেই আছেন যাদেরকে কাতার বিশ্বকাপে আর দেখা যাবে না। রাদামেল ফ্যালকাও, এডিনসন কাভানি, সার্জিও রামোস, হাভিয়ের মাসকারেনো, এমনকি পঁয়ত্রিশ ছুঁই ছুঁই লিওনেল মেসিও কাতার বিশ্বকাপের বাইরে থাকতে পারেন। তালিকাটা নেহাত ছোট নয়।সূত্র, বিডিপ্রতিদিন