উন্নয়নবঞ্চিত সৈয়দপুরের ২০ হাজার মানুষ : ভরসা বাঁশের সাঁকোই
অনলাইন ডেস্ক : প্রায় শতবর্ষী আব্দুর রশীদ। দেখেছেন বাড়ির পাশে চিকলী নদীর বাঁশের সাঁকোটি পার হয়ে জামিদারে কাচারি ঘরে কৃষকদের কাছে কীভাবে কর আদায় করা হত। কর পরিশোধে ব্যর্থদের পেতে হত অমানুষিক নির্যাতন। জমিদার প্রথা এখন আর নেই। জমিদারদের পাইক পেয়াদাও নেই। তবে সেই স্থানে এখনো আছে বাঁশের সাঁকো। যার কারণে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
বৃদ্ধ আব্দুর রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ ইংরেজ বা তাদের কেউ নেই। থাকলে তারাই এ স্বাধীন দেশে বঞ্চনার প্রতিবাদ করতেন। ওই স্থানেই প্রতি বছর নতুন বাঁশ সংগ্রহ করে সাঁকো নির্মাণ করা হয়। চলে প্রতিদিন সংস্কার। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন্তরের মেলবন্ধনে এক হয়ে চিকলির দুই পাড়ের বাসিন্দারা সংগ্রাম করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব ওসুখাই ও পশ্চিম ওসুখাইয়ের তোফায়েলের মোড় সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে চিকলি নদী। সেখানে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কাচারিতে এসে কৃষকরা কর দিত কাচারি ঘরে। আজ কাচারি ঘর নেই। তবে ইতিহাসের সাক্ষী সার্কোটি আছে। এর নামকরণে হয়েছে কাচারি ঘাট। পূর্ব বসবাসকারী কাশিরাম বেলপুকুর ও খাতামধুপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চালাচলের একমাত্র পথ এটি। কারণ এই সাঁকো পেড়িয়ে কামারপুকুর ডিগ্রী কলেজ, ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর ডিগ্রী কলেজ, সৈয়দপুর শহর, উপজেলা পরিষদ, বিমানবন্দর, ১০০ শয্যা হাসপাতাল ও ফাইলেরিয়া হাসপাতালসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, হাট বাজার, কল কারখানাসহ জীবনের সকল প্রয়োজনীয়তা সৈয়দপুর শহরের যাতায়াত করতে হয়।
এতে প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়। তবে বড় কিংবা ছোট যানবাহন এ এলাকা থেকে শহরে ১২ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া পড়েনি তাদের ওপর। কারণ শুকনো মৌসুমে বাশের সাঁকো থাকলেও বর্ষায় নদীর দুই পাড়ে কাদাপানিতে একাকার হয়। সাঁকোটি পিচ্ছিল হয়ে পানিতে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার।
তোফায়েল হোসেন, আফজাল হোসেন, আব্দুস সামাদ, আজিজুল হকসহ ইউনিয়নের পরিষদ সদস্য আনছারুল হক জানান, ইংরেজ আমল থেকে ভারত উপমহাদেশ, পাকিস্তান, অতঃপর বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও আমাদের এ এলাকায় এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। ডিজিটাল সময়ে এসেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে হয়। আমরা জানি না কবে আমাদের এই দুঃখ শেষ হবে।
কামারপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান জানান, সাকোটি এ ইউনিয়নের কষ্ট। সেতু নির্মাণ হলে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে পথচারীদের।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী রায়হানুল ইসলাম বলেন, নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু হবে।