‘সৌদি আরবে নারীদের ভিসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত’
অনলাইন ডেস্ক : সৌদি আরব থেকে ফেরা নারীদের দুজনসৌদি আরব থেকে শনিবার রাতে দেশে ফিরেছেন হবিগঞ্জের নাজমা (ছদ্মনাম)। সেদেশে গৃহকর্মী জীবনের করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের যে অবস্থা, তাতে নারীদের ভিসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
শনিবার (১৯ মে) রাতে এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে নাজমাসহ ৬৬ জন নারীশ্রমিক দেশে ফেরেন। তাদের অধিকাংশই নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কথা হয় নাজমার সঙ্গে।
তিনি জানান, সৌদি আরব যাওয়ার আগে তিনি ওমানে কাজ করেছেন এক বছর। তার কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল এবং আরবি ভাষাও জানা ছিল। পরে প্রায় এক বছরের মতো থেকেছেন সৌদি আরবের রিয়াদে। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের যে অবস্থা, তাতে নারীদের ভিসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সেখানে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও কোনও মালিক ইচ্ছে করেই পুলিশে অভিযোগ করে ধরিয়ে দেয়। আমার ৩ মাসের বেতন দেয়নি। আমরা এই বিমানে এসেছি ৭০-৮০ জনের মতো। রিয়াদের কারাগারে আছে আরও ৪০ জনের মতো।’
একই ফ্লাইটে ফিরেছেন চাঁদপুরের নাহার বেগম (ছদ্মনাম)। আরবদের ভাষা তারও জানা। এই বছরের ১৪ এপ্রিল তিনি সৌদি আরব যান। সেখানে যাওয়ার পর তাকে ১৫ দিনের মতো বিমানবন্দরেই রাখা হয়েছিল। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে। যে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে সে নাহারকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছিল।
তিনি ‘আমাকে প্রথমে বলেছে এক হাজার রিয়াল বেতন দেবে; কিন্তু কাজের চুক্তি করার সময় দেখি ৮০০ রিয়াল। তারপরও কাজ করলাম কিন্তু মালিকের ব্যবহার ছিল খুব খারাপ। কথায় কথায় গালি দিতো। আরবিতে বলতো, মিসকিন, তোরা মিসকিন। আমাদের কিনে নিয়েছে, অনেক টাকা দিয়ে এনেছে–এসব কথা বলতো।’ নাহার জানান, মারধরের সময় তার মালিক হাত দিয়ে কান বরাবর আঘাত করতো।
নাহার আরও জানান, একদিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে চলে যান। সেখানে খাবার থেকে শুরু করে সবরকম সহায়তা দূতাবাস থেকে করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট মালিক রেখে দিয়েছে, ফেরত দেয় নাই। দূতাবাস আউটপাস দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই বিপুলসংখ্যক নারী বিদেশ পাড়ি জমান। তাদের বেশিরভাগই যান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়। তাদের অধিকাংশই গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন সেখানে।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবাননসহ বিশ্বের ১৮টি দেশে যাচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরা।
জনশক্তি,কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন; যা মোট অভিবাসনের ১৩ শতাংশ। যা এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত একা অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিককে অভিবাসনে বাধা দেওয়া হলেও ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে তা কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে। তবে ২০১৬ সালে অভিবাসী নারী শ্রমিকের সংখ্যা নেমে আসে ১৬ শতাংশে এবং ২০১৭ সালে ১৩ শতাংশে।