কেমন আছে সেই মুক্তামণি?
নিউজ ডেস্ক : সাতক্ষীরার ১২ বছরের শিশু মুক্তামণি দেড় বছর বয়সে হেমানজিওমা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তার বিরল রোগের কারণে সংবাদমাধ্যমে গতবছর ব্যাপক প্রচার পায় তার সম্পর্কে খবর। এরপর ঢাকায় কয়েক মাস ধরে তার চিকিৎসা চলে।
মুক্তামণির বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য ছয় মাস ধরে ঢাকায় অবস্থানের পর গত ২২ ডিসেম্বর তারা হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। এরপর থেকে কিছুদিন মুক্তামণি কিছুটা ভালো থাকলেও, এখন তার অবস্থা আবার খারাপ হয়ে গেছে।
টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘অবস্থা সেরকমই আছে। হাতে ব্যান্ডেজ। ড্রেসিং কতে হয় নিয়মিত। ১০ দিন আগের কথা-একদিন ড্রেসিং করতে দেরি হয়েছিল। তারপর সেখান থেকে পোকা বের হতে শুরু করে। ৩০-৩৫ টার মতো পোকা বের হইছে।’
ইব্রাহীম হোসেন আরো জানান, মুক্তামণির হাতের পাঞ্জা ও কবজির পাশ দিয়ে গর্ত মতো হয়ে গেছে। রক্ত বের হচ্ছিল কিছুদিন। তাকে অস্ত্রোপচার করে চামড়া যেভাবে লাগিয়ে দিয়েছিল সেগুলো পচে যাচ্ছে বলেও জানান মুক্তামণির বাবা। তিনি বলেন, ‘উনারা (চিকিৎসকরা) চেষ্টা করছেন, কিন্তু উন্নতি তেমন কোনকিছু হয়নি।’
মুক্তামণির হাতে তিন কেজি ওজনের টিউমার হওয়ার পর চিকিৎসকরা সেটি অপসারণ করে। সে কোনদিন পুরোপুরি সেরে উঠতে পারবে না বলে সেসময় জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কারণ তার শরীরের আরো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নষ্ট হয়ে গেছে।
শিশুদের রক্তনালীর টিউমার হেমানজিওমা খুব একটা জটিল রোগ নয় বলছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু মুক্তামণির ক্ষেত্রে চিকিৎসার অভাবে ডান হাতের টিউমারটি মারাত্মক রূপ নেয়। তার বিরল রোগের খবরটি গণমাধ্যমে এলে তখন তার চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারের তরফ থেকে বহন করার খবর আসে সংবাদ মাধ্যমে।
এখন সরকারের তরফ থেকে তাদের যোগাযোগ করা হয় কিনা- জানতে চাইলে ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পত্রিকায় মেয়ের হাত থেকে রক্ত আর পোকা বের হওয়ার খবর শুনে ডাক্তার সাব ফোন দিছিলেন।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন সোমবার বলেন, ‘গতকাল ও গত পরশুও আমি তার বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। বললাম, বিভিন্ন খবরে বলছে তার হাত থেকে নাকি পোকা বের হচ্ছে? আমি তাকে ছবি পাঠাতে বললাম এবং প্রয়োজনে তাকে নিয়ে আসতেও বললাম। কিন্তু সে তো জানালো হাতে প্রচণ্ড ব্যথা -এটুকুই।’
তবে মুক্তামণির যে অবস্থা তাতে তার ‘শতভাগ আরোগ্য সম্ভব নয়’ বলে জানান এই চিকিৎসক।কিন্তু মুক্তামণি এ অবস্থায় আর কোনভাবে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে রাজি হচ্ছে না বলে জানান তার বাবা। এখন মুক্তামণির সময় কাটে ঘরের ভেতর। সেখানেই তার ড্রেসিং চলছে।
‘মাঝে মাঝে ব্যথায় জোরে জোরে চিৎকার করে। তবে এত বড় একটা রোগের পরও ও যেভাবে আছে, আল্লাহ ওরে অনেক ধৈর্য দিছে।’
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, মুক্তামণিকে নিয়ে আসতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে ওর ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে, লিভার বড় হয়ে গেছে। এরকম অনেক সমস্যা আছে।